নিউমোনিয়া ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিল একটি রোগ। নিউমোনিয়া প্রায় সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে কিন্তু পাঁচ বছর বা তার কম বয়সি শিশু ও বয়স্কদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে শিশুরাই এ রোগে বেশি মারা যায়। এর কারণ নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের লাগামহীন অসচেতনতাই মৃতু্যহারের জন্য অনেকটা দায়ী কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সময়ের পরিক্রমায় অসচেতনতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রোগীকে বাঁচাতে চিকিৎসকরাও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে অনেক সময় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। ফলস্বরূপ, নিউমোনিয়ায় শিশু মৃতু্যহারও বেড়ে যাচ্ছে। নিউমোনিয়া রোগে শিশুদের বেড়ে যাওয়া মৃতু্যহার কমাতে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ নভেম্বর নিউমোনিয়া দিবসও পালন করা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নিউমোনিয়ার ফলে শিশু মৃতু্যহার অনেক বেশি। তাই বিশ্বব্যাপী নিউমোনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ত্বরান্বিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া গেস্নাবাল অ্যাকশন পস্ন্যানকে একত্রিত করেছে। ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষত শীতকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও অন্যান্য অসুস্থতার কারণেও এই রোগ হতে পারে। যেহেতু এটি শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, তাই নিউমোনিয়া হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও ছড়ায় যা বর্তমান সময়ের কোভিড-১৯ এর মহামারিতে পৌঁছে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি রোগ-প্রতিরোধে শিশুকে জন্ম পরবর্তী ৬ মাস মাতৃদুগ্ধ পান ও পরিপূরক খাদ্য খাওয়াতে হবে, কেননা শিশুর অপুষ্টি এই রোগ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। আর ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ রোধ করার পাশাপাশি নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকা প্রদান করতে হবে। তবে শুধু অভ্যন্তরীণভাবে সচেতন হলেই নিউমোনিয়ার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিউমোনিয়ার হার কমানোর লক্ষ্যে সর্বস্তরে টিকা সরবরাহ ও প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকতে হবে, সেবাদাতাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবশেষে, নিউমোনিয়া রোগ গোড়া থেকে তুলে ফেলতে আঞ্চলিক পর্যায় থেকেই কার্যকর পরিকল্পনাসহ সেগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তবে এত কিছুর পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করলেও, সবার আগে আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেদেরই সচেতন হতে হবে, কেননা এখন আমরা শুধু ঘাতকব্যাধী করোনা মহামারি ঠেকাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত ধৌত করছি; কিন্তু এগুলো শুধুই সময় বা পরিস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের সবসময় করা উচিত, কারণ জীবাণু শুধু মহামারির সময় থাকে ব্যাপারটা এমন নয়, জীবাণু সবসময় আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকে। তাই আমাদের সবার উচিত শুধু নিউমোনিয়া নয়, নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক ব্যবহার ও নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করা।
সুরাইয়া
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Copyright JaiJaiDin ©2022
Design and developed by Orangebd