বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসি সম্মেলন-২০২২ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়ন হোক

নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে পুরো বিশ্ব। দেশেও প্রায় প্রত্যেকটি খাতে এর প্রভাব পড়েছে। বিঘ্নিত হয়েছে মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা। আর এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এই মহামারির কারণে দুই বছরের বিরতির পর মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ডিসি সম্মেলন। ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে 'জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনা দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'মানুষের কল্যাণে আপনাদের সব প্রকার ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করতে হবে।' সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের 'জনগণের খাদেম' ভাবার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ডিসিদের ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে, ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, 'সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।' এছাড়া তিনি বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নিজেকে জনগণের খাদেম হিসেবে অর্থাৎ সেবক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমিও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের একজন সেবক মনে করি। ক্ষমতায় আসা, প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানে জনগণের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাওয়া এবং যেই লক্ষ্য স্থির করেছি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।'

আমরা বলতে চাই, প্রধনামন্ত্রী ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা এবং জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়ার পাশাপাশি যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ- যা দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আমলে নেওয়া দরকার, প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনাগুলোর মধ্য রয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকারের জারি করা সব নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে প্রতিপালন নিশ্চিত করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, সরকারি অফিসগুলোয় সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করা, এসডিজির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা জোরদার, গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করাসহ শিক্ষা কার্যক্রম, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, জনসাধারণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত, বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন্ন রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ মোট ২৪টি নিদের্শনা দেন। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি নিদের্শনা যেমন সময়োপযোগী, তেমনি এগুলো আমলে নিয়ে নিদের্শনার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও জারি রাখতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে কাজ করাসহ জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, 'দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে ডিসিদের লক্ষ্য রাখতে হবে।' আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর যথার্থ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। কেননা, সাধারণ মানুষ সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সামগ্রিকভাবে যে নিদের্শনাগুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে, এমতাবস্থায় সেবা নিশ্চিত করাসহ যে নির্দেশনাগুলো প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করবে বলেই আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে