দূষণ ও দখল থেকে নদী বাঁচাতে হবে

যথাযথ উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নদীর নাব্য রক্ষা, দূষণ ও দখলরোধে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আরও তৎপর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীগুলোতে যেন নাব্য থাকে, নদী দূষণ এবং দখলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ আমাদের নদী রক্ষার যে জেলা কমিটি, তার সভাপতি জেলা প্রশাসক। তারা ইতোমধ্যে অনেক ভূমিকা রাখছেন এবং এগুলো আরও জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের মধ্যদিয়ে নদীর নাব্য নষ্ট হয়ে যায় এবং আমাদের নৌপথগুলোতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এগুলো সঠিকভাবে মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। এটা সত্য, রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের ভেতরে ও আশপাশের নদী-খালগুলোর দখল এবং দূষণের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বাস্তবতা হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। দেশের সব নদী, বিল ও খালগুলোর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি আবারও যাতে দখলের প্রক্রিয়া শুরু না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদাররা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তারা নদীর তীরে সীমানা পিলার পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়। ৫৩ জেলার নদী ও খালের বিভিন্ন অংশ দখল করেছে ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তবে নদী দখলদারদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদারদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি অংশ। বস্তুত, দেশের সব নদী ও খালই দখলের শিকার হয়েছে। মনে রাখতে হবে, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদী, খাল-বিল অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, নদ-নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যায়। তবে যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদীরক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোনো সময় উদ্ধার করা সম্ভব। দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদী দখলমুক্ত করতে গিয়ে সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পঁচাত্তরের পর একটি ধারা তৈরি হয়, মানুষ মনে করেছিল অপরাধ করলে বিচার হবে না, নদী দখল করলে বিচার হবে না। অনেকে নদীর পাড়ে গিয়ে ঘর তুলেছে, অনেকে নদীর পাড়ে কলকারখানা গড়ে তুলেছে। তারা মনে করেছে এটা দখল নয়, এটা আমার প্রাপ্য অধিকার। এই মনে করে কিন্তু অনেকে নদীর পাড় দখল করেছে। নদীগুলোকে রক্ষা করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করাই নদী দিবসের অঙ্গীকার। ভুলে গেলে চলবে না, দেশের নদীগুলোর যতটুকু অস্তিত্ব আছে তাও আজ অসহায়। নদী রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নদী উদ্ধারে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সুপারিশও কাজে আসছে না। দেশের নদ-নদী অব্যাহতভাবে দখল হয়েছে, হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, নদ-নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদীকে বাঁচাতেই হবে।