পাঠক মত

ইউক্রেন সংকট

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে সংকট থাকবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে এবং তার সমাধান হবে এটাই বিশ্ব রাজনীতির ধর্ম। এই নীতি আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশেষভাবে প্রত্যক্ষ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করলাম বিশ্বে দুই পরাশক্তি উত্থান ঘটল। একদিকে পুঁজিপতি রাষ্ট্র গণতন্ত্রের পূজারি যুক্তরাষ্ট্রের, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়ার উত্থান। যে রাশিয়া প্রতিষ্ঠা করল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করার জন্য। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও একে অপরের মুখোমুখি স্থানে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তাদের মধ্যে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেল যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব চলছিল তখন রাশিয়া চীনকে সমর্থন দিয়েছে। আবার ইরানকে যখন অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করল তখন রাশিয়া-ইরানের সঙ্গে আঁতাত সৃষ্টি করল। তেমনিভাবে চলছে দুই পরাশক্তির একে অপরের বিপরীত অবস্থান স্পষ্ট নিদর্শন। আজকে আলোচনা করব ইউক্রেন নিয়ে যে রাষ্ট্রটি রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। রাশিয়ার শস্য ভান্ডার বলে যার পরিচয় রয়েছে। তাহলে মূল আলোচনায় আগে ইউক্রেনের পরিচয় জেনে নেওয়া যাক। ইউক্রেন রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ, ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী ইউক্রেনের জনসংখ্যার প্রায় ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ জাতিগত ইউক্রেনীয়। আর ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ জাতিগত রুশ। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে রুশ ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনকে ভৌগোলিকভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। পূর্ব ইউক্রেন, দক্ষিণ ইউক্রেন, মধ্যে ইউক্রেইন এবং পশ্চিম ইউক্রেন, ২৪টি প্রদেশে বিভক্ত। রাজনৈতিকভাবে সমগ্র ইউক্রেনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। পূর্ব এবং পশ্চিম ইউক্রেন। পূর্ব ইউক্রেন সমর্থন করেন রাশিয়াকে, অন্যদিকে পশ্চিম ইউক্রেন সমর্থন করেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ১৬৬৪ সালে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেয় ইউক্রেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে এবং রাশিয়া যখন পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে এমন সময় ইউক্রেন রাশিয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে অনুগত হয়ে ওঠে, ফলে সংকটের শুরু হয়। এই সংকটের প্রত্যক্ষ প্রতিচ্ছবি দেখা যায় ২০০৪ সালের নির্বাচনে। যেখানে নির্বাচনে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যাদের একজন ছিলেন ইউয়ুশ্চেষ্কো অন্যদিকে ইয়ানুকোভিচ। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ইউয়ুশ্চেষ্কোকে সমর্থন করছিলেন পশ্চিম ইউক্রেন। সমর্থিত অর্থাৎ যিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত। অন্যদিকে ইয়ানুকোভিচ রাশিয়া সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচনে ইয়ানুকোভিচ নির্বাচনে জয়লাভ করে। কিন্তু সেই সময় ইউক্রেনে কমলা বিক্ষোভ শুরু হয়, যার ফলে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল হয়ে যায়। ডিসেম্বর ২০০৪ সালে আবার নির্বাচন হয়। যেখানে জয়লাভ করে ইউয়ুশ্চেষ্কো। এই জয়ের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তাদের প্রভাব বিস্তারের পর্বের সন্ধান লাভ করে। ইউক্রেনের পশ্চিম অংশে জনগণের চাওয়ার কারণে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চায় যেন ইউক্রেনে একটা শান্তিপূর্ণ শাসন কায়েম থাকে। তাই তারা বর্তমানে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় এটা যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। যদি তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন তারা একত্র হতে পারবে না যার ফলে সংঘটিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউক্রেনের অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যেখানে কারও হস্তক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু এই বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা সম্পূর্ণ বিপরীত। ইউক্রেনে এক লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করেছেন তারা আবার ইউক্রেনকে নিজের বলে দাবি করছে, যার ফলে সংকটের সূচনা হয়েছে। কারণ সেখানে ন্যাটোর সৈন্য রয়েছে সেখানে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন কখনো ভালো চোখে দেখবে না যুক্তরাষ্ট্র, তাই সংকটের সূচনা হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে তা চরম আকার ধারণ করছে। যেটা নতুন সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বকে। এই সংকটকে আটকানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। তাই তো এখনো চরম অবস্থা বিরাজ করছে ইউক্রেনে এখন দেখার পালা কূটনৈতিকভাবেই সমাধান সম্ভব হয় কিনা। নাকি চরম সংকট সংঘাতের রূপ নেয় এটাই দেখার বিষয়। জাফরুল ইসলাম প্রাবন্ধিক কলামিস্ট