ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ

দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন জরুরি

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের ফালাম শহর বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪। ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ৫৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ভূকম্পনটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পনটি মিজোরাম, মণিপুর ও আসামে অনুভূত হয়। স্থানীয় সময় তখন বেলা ৩টা ৪২ মিনিট। মিজোরামের চাম্পাই থেকে ৫৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে কেন্দ্রভূমির ৬০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি। এর আগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ছয় দশমিক এক। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন স্থান। মিয়ানমারের চীন রাজ্যের হাখা শহরের ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এর উৎপত্তি। ভূতাত্ত্বিক ও ভূমির গঠন অনুসারে বাংলাদেশ ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল। বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৮টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছিল ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলের কাছার এলাকায়। রিখটার স্কেলে এ কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল ভূমিকম্প, ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল, ১৯২৩ সালের দুর্গাপুরের ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল আগে থেকেই ভীষণ ঝুঁকিতে। ভূমিকম্পের কারণে সিলেটে বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়- যা এখনো রয়েছে। ফাটলগুলো সুপ্ত অবস্থায় আছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ায় সেটি নাড়াচাড়া দিতে পারে। ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এর আগে সিলেটে টানা ছয় দফা মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে। দেশে বারবার ভূমিকম্প হওয়াকে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের সতর্কসংকেত হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদ ও ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে 'ডাউকি ফল্টে' থাকা সিলেট বড় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হতে পারে বলেও তারা জানিয়েছেন। ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে সিলেট হয়ে ভুটান পর্যন্ত ভূগর্ভে যে চু্যতি আছে, তাতে বিপুল পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। সেটি মৃদু ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি মানে এই নয়, এখানে আর বড় ভূমিকম্প হবে না। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বর্তমানে আমাদের প্রস্তুতি খুবই কম। মাঝারি ও বড় ভূমিকম্প হলে দেশ বহুগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মূল কারণ, আমাদের ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে উঁচু ভবন বানানোর ঝোঁক বাড়ছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করার মূল অস্ত্র হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে চলা। কিন্তু কেবল বিল্ডিং কোড থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর সফল ও সঠিক প্রয়োগ। মনে রাখতে হবে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। যে কোনো সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে। সুতরাং দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং এর বিকল্প নেই।