শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিটের পর বড় চ্যালেঞ্জে বরিস জনসন

এ কথা নিঃসন্দেহ যে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই মুহূর্তে প্রচন্ড চাপে আছেন। এই চাপ তার দল ও দলের বাইরে থেকে। স্কটল্যান্ড কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডাগলাস রস জানিয়েছেন, তিনি দলের ১৯২২ কমিটির কাছে লিখবেন, যাতে দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি শুরু করা যায়।
অলোক আচার্য
  ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্ষমতায় যাওয়ার পেছনের ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। মূলত একটি ইসু্য সেসময় তোলপাড় করে পুরো ব্রিটেনে। বিশ্বজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তা হলো বেক্সিট ইসু্য। ব্রেক্সিট ইসু্যতে বিভিন্নভাবে জলঘোলা হওয়ার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেকে সরে দাঁড়ান থেরেসা মে। এর পরপরই আলোচনায় উঠে আসে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনে তখন এমন একটা সময় বিরাজ করছিল, যে এই পদে আসবেন তাকে তার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই পদের জন্য রক্ষণশীল দলের বরিস জনসন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেরেমি হান্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। একজন সাংবাদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বরিস জনসন ব্রিটেনের এই পরিস্থিতি বেশ সফলভাবেই সামাল দিয়েছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি কতটুকু সফল হন তা নিয়েই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে পার্টি দিয়েই বিপাকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তার পদত্যাগের দাবিতে স্বর বাড়তে থাকে। তার নিজ দলের অনেক নেতা আছেন সেই কাতারে। তার পদত্যাগের দাবিতে ডাউনিং স্ট্রিটে বিক্ষোভও হয়েছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পদত্যাগের গুঞ্জন। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মূলত ঘটনা হলো ২০২০ সালে ব্রিটেনে যখন কঠোর লকডাউন চলছিল সে সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং তার বাসা ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একটি মদের পার্টি হয়। যাতে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। সারাদেশের মানুষ যখন লকডাউন মেনে বাড়িতে ছিল, নিরাপদ দূরত্ব মানছিল তখন। এই পার্টির আয়োজনের খবর সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সবাই। এমনকি প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যের আগের দিনও মদের পার্টি হয়েছিল। এরপর তিনি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। মূলত এই ঘটনার পরে তার প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনিই যদি লকডাউনের নিয়ম অনুসরণ না করেন তবে তা জনগণের ওপর কীভাবে প্রয়োগ করবেন। ব্রিটেনের আইনের গতিতে কাউকে ছাড় দেওয়ার রীতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও লকডাউন রীতি ভাঙার পর তার ওপর চাপ বাড়তে থাকা স্বাভাবিক। কনজারভেটিভ দলের এখন পর্যন্ত ৫৮ জন এমপি খোলাখুলি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।

ব্রেক্সিট নিয়ে উত্তাপ শুরু হয় ২০১৬ সালে। যখন ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যুক্তরাজ্যে চাপ বাড়তে থাকে। এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দুই-ই ছিল। ফলে ওই বছর ২৩ জুন ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটে হেরে যায় ইইউপন্থি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। গণভোটের পরাজয় মেনে নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। তারপর এই ব্রেক্সিট ইসু্য মূল রেখেই ক্ষমতায় বসেন থেরেসা মে। ব্রেক্সিট ইসু্যতে বিভিন্নভাবে জলঘোলা হওয়ার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেকে সরে দাঁড়ান থেরেসা মে। এর পরপরই আলোচনায় উঠে আসে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর। ব্রিটেনে তখন এমন একটা সময় বিরাজ করছিল যে, এই পদে যে আসবেন তাকে তার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই পদের জন্য রক্ষণশীল দলের বরিস জনসন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেরেমি হান্টের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হন ব্রিটেনের। তিনি অবশ্য তার চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতাগুলোয় ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। এ সবকিছুর মধ্যে ব্রেক্সিট থেকে ব্রিটেনকে সুষ্ঠুভাবে বের করে আনাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি ভালোভাবেই নিয়েছিলেন এবং একটি বাণিজ্যচুক্তি করার মাধ্যমে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন। যুক্তরাজ্যের এই চ্যালেঞ্জ যখন বরিস জনসনের কাঁধে আসে তখন তাকে বহু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই জোর দেন ব্রেক্সিটের ওপর। সেই ব্রেক্সিট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা দক্ষ প্রধানমন্ত্রীই লকডাউনের ভেতর পার্টির জেরে এখন অনাস্থায় পরিণত হয়েছেন।

এ কথা নিঃসন্দেহ যে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই মুহূর্তে প্রচন্ড চাপে আছেন। এই চাপ তার দল ও দলের বাইরে থেকে। স্কটল্যান্ড কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডাগলাস রস জানিয়েছেন, তিনি দলের ১৯২২ কমিটির কাছে লিখবেন, যাতে দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি শুরু করা যায়।

ক্ষমতাসীন নতুন নেতা নির্বাচন করতে হলে অন্তত ৫৪ জন এমপির প্রত্যেককে দলের কাছে আলাদাভাবে লিখতে হবে। আবার এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই জনসন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির কয়েকজন বিদ্রোহী এমপিকে বস্ন্যাকমেইল করা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে চাপ আরও বেড়েছে। তবে তিনি এ ধরনের কোনো তথ্য বা নথি দেখেননি বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তা হয়তো আরও কিছুদিন স্থায়ী হবে। করোনা পরিস্থিতি পৃথিবীর সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতির এক পর্যায়ে লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। সেই লকডাউনে এমন পার্টি যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। ফলে এ ঘটনা সামনে আসতে মানুষ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তবে এটা যে তার প্রধানমন্ত্রিত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে সেটা হয়তো এভাবে পূর্বানুমান করতে পারেননি! যদিও বিধিনিষেধ মেনে চলার কথা ছিল। ঘটনাটিকে মোটেই ছোটো করে দেখার বিষয় নয়। আর সে কারণেই তা প্রকাশের পর এত হইচই, এত সমালোচনা। বেক্সিটের পর তার নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শক্তি বা দক্ষতা আছে বলে ধরা যায়। যদি তিনি পদত্যাগ করেন তবে পার্লামেন্টের আস্থা কে পাবেন তার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে পারেন। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। আবার আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। যেভাবে তার ওপর অনাস্থার পালস্না ভারী হচ্ছে- তিনি কতক্ষণ এবং কীভাবে এবারের পরিস্থিতি পারি দিতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

অলোক আচার্য : শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে