বেড়েই চলেছে করোনায় মৃতু্য ও সংক্রমণ। বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ হাজার ৪০২ জন। আগের দিনের তুলনায় মৃতু্যর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। আমাদের দেশেও সংক্রমণ ও মৃতু্য বেড়েই চলেছে। দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ২৮ হাজার ২৭৩ জন। বাংলাদেশে শনাক্ত বেড়েছে ১৮০ শতাংশ এবং মৃতু্য বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৬ কোটি, মারা গেছে ৫৬ লাখ। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের তিনটি উপধরন হয়েছে। এই উপধরনগুলো রাজধানী ঢাকায় বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে ১ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৮ শতাংশই ছিল করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের দেহে। ওমিক্রনের জিনোম সিকুয়েন্স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা শহরে তিনটি সাব-টাইপ রয়েছে। এগুলো আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে ৬ ডিসেম্বর ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ১১ ডিসেম্বর। ওই মাসেই আইসিডিডিআরবির ল্যাবে পরীক্ষা করা ঢাকা শহরের ৭৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে পাঁচটিতে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যগুলো ছিল ডেল্টা। ২৭ জনের কোনো উপসর্গও ছিল না। এদিকে, বাংলাদেশেও করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টা ও ওমিক্রনের প্রভাবে ফের সংক্রমণ বেড়েছে।
উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহরে প্রথম করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই ভাইরাসটি বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে 'বৈশ্বিক মহামারি' হিসেবে ঘোষণা করে। দেশে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে যে কোনো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ থাকবে। ওমিক্রন আতঙ্ক এবং সামগ্রিকভাবে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটা সত্য, প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতু্য হারও বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতি অতীতে দেখা যায়নি। যদিও ওমিক্রনে সংক্রমিতদের অধিকাংশই উপসর্গহীন। তবে সর্দি জ্বর মাথাব্যথা কাশি রয়েছে অনেকেরই। কেউ কেউ খাবারের স্বাদও পাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সেইসঙ্গে আইসিইউ বেডের চাহিদাও বাড়ছে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের জনগণ মাস্ক পরার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। মাস্ক পরা ছাড়া যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, আড্ডা জমাচ্ছে, গল্প করছে। রাস্তায় বের হলেই এই ধরনের দৃশ্য চোখে পড়ে। ফলে বিপদ বাড়ছে। আমরা মনে করি, সরকারকে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত। যারা মাস্ক না পরে বাইরে বের হবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরো তৎপর ও মনোযোগী হতে হবে।