শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যা

রোধে উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

আত্মহত্যার ঘটনা রোধ না হলে কিংবা এই ধরনের প্রবণতা বাড়লে তা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। বিশেষ করে এটা বলা দরকার, নানা সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আত্মহত্যা সংক্রান্ত যে চিত্র পরিলক্ষিত হয়, তা অত্যন্ত পরিতাপের। কেননা, তুচ্ছ কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, করোনাকালে ২০২১ সালে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালেয়ে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। এছাড়া জানা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই সম্পর্কের অবনতিজনিত কারণে আত্মহত্যা করেন। মূলত শনিবার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে 'বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা : হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা' শীর্ষক এই সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে। উলেস্নখ্য, প্রায় অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য এবং আত্মহত্যায় জড়িতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আমরা মনে করি, গবেষণা প্রতিবেদনের এই তথ্য আমলে নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যার প্রবণতা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। এটাও এড়ানো যাবে না যে, আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে আঁচলের গবেষণায় উঠে এসেছে, সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। এ ছাড়া পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শিক্ষার্থী এবং আর্থিক সমস্যায়কবলিত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। সমন্বয়কৃত তথ্য থেকে আরও দেখা যায়, মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে নিজের জীবন হননের পথ বেছে নিয়েছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। আরও নানাবিধ কারণে আত্মহত্যা করেছেন মোট ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, গবেষণা প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে- যা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৬২ জন।

আমরা মনে করি, আত্মহত্যা সংক্রান্ত এই চিত্র আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আত্মহত্যা যে জীবনের কোনো সমাধান নয়, এমন বিষয়কে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত মনো-চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময়েই বলেছেন, বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা ও আর্থিক সংকটের ফলে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। আমরা বলতে চাই, আঁচলের গবেষণা প্রতিবেদন যেমন আমলে নেওয়া জরুরি, তেমনিভাবে সংশ্লিষ্টদের এটা মনে রাখা দরকার, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহ্য মানসিক চাপ, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া, প্রেম, দাম্পত্যকলহ প্রভৃতি থেকে সাময়িক নিষ্কৃৃতি পাওয়ার জন্য অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়- এমন বিষয়ও আলোচিত। ফলে, এই বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, আত্মহত্যা সম্পন্ন হয়ে গেলে কিছুই আর করার থাকে না। ফলে প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ কার্যকর উদ্যোগ জারি রাখতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা রোধ নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং আত্মকর্মসংস্থান তৈরি, কমিউনিটি ও পরিবারের সাপোর্টসহ পূর্ববর্তী রিসোর্সগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করার মাধ্যমে হতাশামুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করতে এখনই সবার এগিয়ে আসতে হবে। তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। জীবন মূল্যবান, আর তা আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে এমনটি কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে