শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী সহিংসতায় ৯৫ জন নিহত

এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
নতুনধারা
  ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চলছেই। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৫ মাসে নির্বাচনী সংঘাত ও হানাহানিতে সারাদেশে ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে। এই দুই ধাপে যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রথম ধাপে দুই ভাগে নির্বাচন হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নির্বাচন হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত তখন থেকেই সারাদেশে নির্বাচন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দেয়। প্রথম ধাপে ৫ জন, চতুর্থ ধাপে ১০, পঞ্চম ধাপে ২৩ ও ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত একজনের মৃতু্য হয়েছে।

ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং যথাযথ নিয়মনীতি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে, এমনটি প্রত্যাশিত হলেও, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা বিভিন্ন সময়েই ঘটে- যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়েছে। রোধ হয়নি করোনায় সংক্রমণ ও মৃতু্যও। এর মধ্যেও যদি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে- সেটি আমলে নেওয়া সমীচীন।

বিচ্ছিন্নভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, গোলাগুলি ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটলে তা শুধু উদ্বেগ বা দুঃখজনকই নয়, বরং পরিতাপেরও।

প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনেও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল- তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা ছিল, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। এমন কি ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল। সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

মনে রাখতে হবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আর তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। ফলে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর হতে হবে। বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে এটা নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ভোটারদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়া এবং ভোটারদের উপস্থিতি কম হলে ভোট ডাকাতি ও জাল ভোটের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়বে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সহিংসতা-সংঘাতের মতো ঘটনা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে