অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা

বাংলাদেশি মাকে অভিনন্দন

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিবিসির করা বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন সীমা সরকার নামের এক বাংলাদেশি মা। তার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভতির্র সুযোগ পেয়েছেন। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, ভতির্ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্র বিষয়টি সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে যখন একজন প্রতিবন্ধী সন্তানকে শিক্ষিত করতে মায়ের সাহসিকতা ও প্রচেষ্টার বিষয় সামনে এসেছে তখন তা অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। তথ্য মতে জানা যায়, ২১ সেপ্টেম্বর মায়ের কোলে উঠে ভতির্ পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান হৃদয়। সেই ছবি সাড়া জাগায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মায়ের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ হয় দেশের মানুষ। জানা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করানোয় নিগ্রহের শিকারও হয়েছেন সীমা সরকার। স্বল্প আয়ের পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশুকে পড়াতে গিয়ে আথির্ক অনটনেও পড়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি যে দমে যাননি এবং কতটা সাহসিকতার সঙ্গে ছেলেকে শিক্ষিত করতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট। এটা অজানা নয়, বাংলাদেশে প্রায় কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য ব্যবস্থা নেই। ফলে ছেলেকে কোলে নিয়ে তিন-চার তলা সিঁড়িও বেয়েছেন মা সীমা সরকার। আর যখন বিবিসির তালিকায় ৮১তম স্থানে রয়েছেন তিনি, তখন তা অত্যন্ত সুখকর এবং একই সঙ্গে প্রেরণাদায়ী। উল্লেখ্য, বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৫ থেকে ৯৪ বছর বয়সী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীদের নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সোমবার বিবিসি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই তালিকায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মেয়ে চেলসি ক্লিনটনও। তিনি অনেক বইও লিখেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলাডর্ তালিকায় থাকা আরেক নারী। তিনি নারী এবং শিশুদের শিক্ষা ও নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। তালিকায় আছেন পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সিনেটর কৃষ্ণকুমারী, সোমালিল্যান্ডের ৩৫ বছর বয়সী নারী লেখক এবং অ্যাকটিভিস্ট নিমকো আলী, ইয়েমেনের শিল্পী, ফটোগ্রাফার এবং অ্যাক্টিভিস্ট বুশরা ইয়াহইয়া আলুটাওয়াকিল, নেপালের নাগরিক উমা দেবী বাদী প্রমুখ। আমরা বলতে চাই, যখন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশি এমন এক মায়ের নাম উঠে এসেছেÑ যিনি সন্তানের পড়ালেখার জন্য এতটা ধৈযর্ ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেনÑ তখন বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, একটি বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গঠনের ক্ষেত্রে সুশিক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। একজন প্রতিবন্ধী সন্তানকে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে যে সাহসী যোদ্ধার পরিচয় দিয়েছেন তিনি, তা নিশ্চিতভাবেই পুরো দেশ ও জাতির জন্য গবের্র এবং এই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে আরও অনেকেই সন্তানকে শিক্ষিত করতে উদ্বুদ্ধ হবে এমনটি কাম্য। আমরা বলতে চাই, সুশিক্ষার বিস্তার না হলে মানুষের বসবাস যথাযোগ্য হবে না এবং একটি দেশ কখনই প্রকৃত অথের্ সমৃদ্ধি অজর্ন করতে পারবে না। বলা দরকার, সরকার শিক্ষাকে বিস্তৃত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দেশের শিক্ষার হারও বেড়েছে যা ইতিবাচক। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, এখনো দেশের অনেক নারী নিযার্তনের শিকার হচ্ছে, সভ্যতার এই যুগে এসেও ববর্রতার মুখোমুখি হচ্ছে। সীমা সরকারও প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করানোয় নিগ্রহের শিকারও হয়েছেনÑ যা আমলে নিয়ে কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সবোর্পরি বলতে চাই, অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় এই মায়ের নাম আসার বিষয়টিকে সামনে রেখে দেশের মানুষ সন্তানকে শিক্ষিত করতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।