পাঠক মত
স্মার্টফোনে আসক্তি, পড়ালেখার ক্ষতি
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
করোনাকালে মানুষের জীবনে এসেছে অনেক বৈচিত্র্য। করোনা কিছু মানুষের জীবনে ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত হলেও অধিকাংশ মানুষের জীবনে কাল হয়ে এসেছে। মানুষের জীবনধারা এসেছে এক বিরাট পরিবর্তন। করোনাকালের নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্মার্টফোনে আসক্তি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিদ্যালয় প্রথম সারির একজন শিক্ষার্থীর কথা। যে কিনা হঠাৎ করে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে এমনকি সে বার্ষিক পরীক্ষায় সম্পূর্ণ শূন্য খাতা জমা দেয়। তারা এমন অবনতির কারণ জানতে চাইলে তার উত্তর হিসেবে পেলাম সে সম্পূর্ণরূপে মোবাইল ফোনে আসক্ত। একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে 'বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান' তবে গত প্রায় দেড় বছরে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ক থেকে মুছতে বসেছে বইয়ের স্মৃতি। সেখানে খেলে বেড়াচ্ছে স্মার্টফোনের নানা রং। ২০২০ সালের মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং বাইরে বের হওয়ারও তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। তাই অনেক শিক্ষার্থী তাদের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে খুঁজে নেয় স্মার্টফোনকে। যা পরবর্তীতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা আসক্তিতে রূপ নিয়েছে। আবার অ্যাসাইনমেন্ট ও অনলাইন ক্লাসের জন্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দেয় স্মার্টফোন। সেই সন্তানরাই অনেকে অনলাইন ক্লাস বাদ দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট, গেমস, টিকটক ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফের তথ্যানুসারে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একজন হচ্ছে শিশু। প্রতিদিন ১৭৫০০০ অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। স্মার্টফোনে আসক্ত একজন শিক্ষার্থী ছয় থেকে আট ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ব্যয় করছে স্মার্টফোনের পিছনে। একজন সাধারন মানুষ কোনো বিষয়ে গড়ে ১২ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। কিন্তু একজন স্মার্টফোনে আসক্তির জন্য সেই সংখ্যা গড়ে ৫ মিনিটেরও কম সময়। ইংল্যান্ডের চারটিসহ জরিপ করে জানা গেছে যে, দেশে বিদ্যালয় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় তাদের তুলনায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইলফোন নিষিদ্ধ তাদের ফলাফল ৬% ভালো। গবেষকদের মতে, স্মার্টফোনের কিছু সুবিধা থাকলেও এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করা এবং পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি করে। স্মার্টফোনে আসক্তি সৃষ্টি হচ্ছে ফ্রিফায়ার, পাবজির মতো অনলাইন গেমসগুলো।এইসব গেমস সারাক্ষন খেলার ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন শারীরিক মানসিক ভাবে অসুস্থ হচ্ছে তেমনি তাদের পড়ালেখার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয় এইসব গেমসের পোশাক ক্যারেক্টার কেনার জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে এবং টাকার জন্য পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এরপর বলা যায় টিকটক ভিডিওর কথা। টিকটক সেলিব্রিটি হওয়ার জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থী সারাদিন ব্যস্ত থাকে ভিডিও নিয়ে। পড়াশোনার বদলে তাদের মাথায় সারাদিন ঘুরপাক খায় নতুন নতুন ভিডিও কন্টেন্ট। এরপর ব্যাস্ত থাকে ফেসবুকে। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয় ফেসবুকে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর হার্ট অ্যাটাকের আশংকা বেড়ে যায়।রক্তচাপ বেড়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের রেডিয়েশন শিশুদের জন্য জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের ব্যাহত করে। বলা হয়ে থাকে 'আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।' এভাবেই যদি শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হতে থাকে। তবে ভবিষ্যৎ তো হবে অন্ধকার। তাই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রতিটি বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা ও প্রয়োজনের বাইরে শিশুদের মোবাইল ফোন না দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে মুক্ত হতে পারে। এমনকি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজে আরও বেশি আগ্রহী করে এবং খেলাধুলার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমেও স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে মুক্ত করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
সাদিয়া আফরোজ নুহা
চরফ্যাশন সরকারি টি. ব্যারেট
মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়