শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন :অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ লায়ন

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে জাতি তা প্রত্যাশা করে।
মো. গনি মিয়া বাবুল
  ১৭ মে ২০২২, ০০:০০

১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ৬ বছর প্রবাসে শরণার্থীর মতো জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। নির্বাসিত জীবন শেষে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ফিরে আসা ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। যা বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহত্তম অর্জন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়া, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা ও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাঙালি সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে অবিরাম কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। সে দেশই হলো এই বাংলাদেশ। আর এই দেশের স্থপতিকে হত্যা করা হলো ১৫ আগস্ট '৭৫-এ। স্বাধীনতা বিরোধীচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মৃতু্যঞ্জয়ী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হচ্ছে- ভাষা আমাদের বাংলা, জাতিতে আমরা বাঙালি, ধর্মে আমরা নিরপেক্ষ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আর্দশে উজ্জীবিত করে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল- এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি তথা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের উন্নতি। তাদের ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের গ্যারান্টিসহ বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। শান্তি, স্বস্তি, শৃঙ্খলা ও জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সব নাগরিকের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহত্তম ও গৌরবময় ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ভূলণ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ১৯৭৫ সালে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তী সময়ে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই কারণে তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।

১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাকে দু'বার গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেরুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উলেস্নখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ শহীদ হন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাকেসহ তার গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাকে লক্ষ্য করে ২ বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তার কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু'টি বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওইদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫ শত এর বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উলেস্নখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল: ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হল: দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে একাধারে প্রায় ১৩ বছর যাবত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উলেস্নখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিদু্যতের উৎপাদন ক্ষমতা ২০০০০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, ৮.২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৮ কোটি মানুষকে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমা (ছিটমহল) সমস্যা সমাধান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ৩৮.৪ থেকে ২১.৩ শতাংশে হ্রাস, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল নির্মাণ, প্রায় সব মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীতকরণ, রেলপথে ব্যাপক উন্নয়ন, আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার, জঙ্গি দমন ইত্যাদি।

উলেস্নখ্য, গত ১৩ বছরে পর্যায়ক্রমে সরকার এক একটি সমস্যার সমাধান করেই চলেছে। ২০০৯ সালে শুরুতেই সরকারকে বিপদে ফেলানোর জন্য পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। সরকারের বয়স যখন মাত্র দুই মাস তখনই ঘটলো পিলখানার বিডিআর হত্যাকান্ড। জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা গতিশীল নেতৃত্বে প্রতিটি সংকটে সরকার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ও যথাযথভাবে সমস্যার সমাধান করেছে। সম্প্রতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলছে। এই অভিযানেও সরকার সফল হবে বলে আমরা মনে করি। দেশের মানুষের মানবিক মর্যাদা, সমঅধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগকে শতভাগ সফল করতে সবার ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা প্রয়োজন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিশ্ব নেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাকে মাদার অব হিউমিনিটি বা মানবতার মা হিসেবে উপাধি প্রদান করা হয়েছে।

শান্তি, মানবতা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ইতোমধ্যে ৪০টি আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করছেন।

সম্প্রতি চলমান মাদক, জুয়া, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান তারই অংশ বিশেষ।

২০২০ সালের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি চলছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দক্ষ নেতৃত্বের ফলে দ্রম্নত প্রতিরোধ ও জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ফলে বিশ্বে যেখানে করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ মানুষের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থা ও জনদুর্ভোগ চরমে। সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা সচল রয়েছে, ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে- যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিকেই এশিয়ায় করোনাভাইরাস সামলে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভালো করেছে, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থান সবার উপরে। বিশ্বে অল্প কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া চালু করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক উন্নত দেশ এখন তাদের জনগণকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে যেখানে সফল হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জনগণকে করোনা প্রতিরোধে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিতে সফল হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে আমরা আশা করি। এই বছর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের দাপ্তরিক সব ভাষায় অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ জাতিসংঘের ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে আন্তর্জাতিক প্রামান্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত দিয়েছে। যা বিশ্বের সব নিপীড়িত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতা ও প্রশংসার সঙ্গে দিনরাত কাজ করে আসছেন। আমরা যার যার অবস্থান থেকে স্বীয় সামর্থ অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনার এ সব ভালো কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করব। পাশাপাশি আমরা হৃদয়ে-অন্তরে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শকে ধারণ করব। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে সফলতার দিকে দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে প্রত্যেক নাগরিককে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকার যথেষ্ট সফল, তবে গাফটি মেরে বসে থাকা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যেন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই দিকে সবকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতসহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করতে হবে। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এখন বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে উন্নত দেশের তালিকায়। শক্তিশালী গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই এ দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করা নিশ্চই সম্ভব হবে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ় হবে বলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার মনোনীতদের বিজয়ী করার জন্য এখন থেকেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতীক, মানবতার ধারক-বাহক, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য অশেষ শুভ কামনা। তার সর্বোচ্চ সফলতা কামনা করছি।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে জাতি তা প্রত্যাশা করে।

লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল : শিক্ষক, গবেষক, কলাম লেখক ও সমাজসেবক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে