বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে

রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১৭ মে ২০২২, ০০:০০

করোনাকালে নানা ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে প্রধান হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট। এই সংকটের মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, যশোরের বাঘার পাড়ায় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ৯০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়েছে। এর মধ্যে ৫৮১ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এ সময়ে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে উদ্বেগজনক হারে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও বলছে, বাল্যবিয়ের তথ্য নিয়মিতই তাদের কাছে আসছে। আর তা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর বিপরীতে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা কমে আসার তথ্য দিয়ে নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন, এ পরিস্থিতি চললে তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ শতাংশ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদের এলাকায় বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সংস্থাটির ১১টি জেলার ৫৫৭ জন সাক্ষাৎকারদাতার ৭২ জন এ সময়ে ৭৩টি বাল্যবিয়ের ঘটনা দেখেছেন। এসব বাল্যবিয়ের ৮৫ শতাংশই হয়েছে সংকটকালে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে। ৭১ শতাংশ বিয়ে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। করোনাভাইরাস সংকটে বিদেশ থেকে ফেরত আসা পাত্র পাওয়ায় ৬২ শতাংশ শিশুর পরিবার বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। ৬১ শতাংশে বিয়ে হয়েছে অভিভাবকের সীমিত উপার্জনের কারণে পরিবার চালানোয় হিমশিম খাওয়ায়। এটা হতাশাজনক চিত্র।

বাল্যবিয়ে রোধে ও কন্যাশিশু-কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি উঠেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবশ্য এখন দেশে করোনার সংক্রমণ একেবারেই কম এবং মৃতু্য নেই।

মহামারির কারণে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ছিল। সেই সঙ্গে বেড়েছে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি। কমছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। যা আমাদের জন্য এক অশুভ বার্তা।

মনে রাখতে হবে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার নির্যাতনে মারায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীরাও আগে বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে।

আমরা মনে করি, সরকারি তৎপরতা না বাড়ালে বাল্যবিয়ে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে