শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডলার সংকট কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ১৯ মে ২০২২, ০০:০০

ডলার নিয়ে সংকট সৃষ্টি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। কেননা, এটা আমলে নেওয়া জরুরি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক এনে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে সরবরাহ করেন এমন ব্যবসায়ী অনেকেই আছে। আর এ জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হয়। ডলার সংকটের কারণে এ ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, এতদিন ব্যাংকাররাই অনেক ব্যবসায়ীর কাছে আসতেন এলসি খোলার জন্য। কিন্তু এখন ব্যাংকারদের কাছে ধরনা দিয়েও এলসি খুলতে পারছেন না- এক ব্যবসায়ী এমনটি জানিয়েছেন। আর এ পরিস্থিতি শুধু একজনের নয়, দেশের ছোট বড় ও মাঝারি মানের আমদানিকারকরা ঋণপত্র খুলতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। ডলারের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছে অনেক ব্যাংক। তাতেও সংকট কাটছে না। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এ সংকট নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

জানা গেছে, প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে কিছু ব্যাংক। কিন্তু আবেদন করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনেকে ডলার পাচ্ছে না, এমন অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া আমদানি ব্যয় যে হারে বাড়ছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হচ্ছে সে তুলনায় কম। এতে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। তথ্য মতে, এ অবস্থায় গাড়িসহ বিলাসপণ্যের আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও এ সময়ে যাতে আমদানি দায় পরিশোধে কেউ যেন ব্যর্থ না হয়, সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, গত ১০ মে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০৩ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। আমরা বলতে চাই, অর্থনীতির সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় জড়িত। ফলে ডলার সংকটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে এলসি খোলা, আমদানি ব্যয় এবং রিজার্ভের ওপর চাপ- সংক্রান্ত বিষয় সামনে আসছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে ডলার সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

জানা গেছে, গত অর্থবছর উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে রেকর্ড ৭৯৪ কোটি ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। গত বছরের জানুয়ারিতে ৪২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার থেকে আগস্টে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে। গত মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২২৪ কোটি ডলারের দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া গত সোমবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবারও কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই '২১-মার্চ '২২) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ- যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রেকর্ড আমদানির এলসি দায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। এতে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণ মিলিয়ে বহুমাত্রিক সমস্যায় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। এছাড়া রিজার্ভের ওপর যেভাবে চাপ পড়েছে, তা দুশ্চিন্তার বিষয় বলেও মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্রম্নত টাকার মান কমানো উচিত, আর, শুধু এলসি খোলার ক্ষেত্রে উচ্চ মার্জিন আরোপ করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা দূর করা যাবে না। বাজারে ডলারের চাহিদাকে মাথায় রেখে দ্রম্নত স্থানীয় মুদ্রার প্রয়োজনীয় অবমূল্যায়ন অপরিহার্য- এমন আলোচনাও সামনে এসেছে। ফলে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডলার সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে