বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফড়িয়াদের কব্জায় ধানের বাজার

কৃষকের স্বার্থ প্রাধান্য দিতে হবে
নতুনধারা
  ২০ মে ২০২২, ০০:০০

কৃষক শস্য উৎপাদন করে যদি ন্যায্যমূল্য না পায়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি স্পষ্ট করে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। কিন্তু বোরোর ভরা মৌসুমে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। হয়তো মানভেদে কোথাও কোথাও ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, এই দামে বিক্রি হওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। কৃষকরা পাচ্ছেন না ধানের ন্যায্য মূল্য। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ কৃষক। পড়তি দামের তেতো অভিজ্ঞতায় ক্ষুব্ধ কৃষক এমনটিও খবরে উঠে এসেছে।

আমরা বলতে চাই, যখন এমনটি আলোচনায় আসছে, ফড়িয়াদের কব্জায় চলে গেছে ধানের বাজার- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং যত দ্রম্নত সম্ভব এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। কেননা এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, কষ্ট করে ফসল ফলানোর পরেও কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে এই বিষয়টি অত্যন্ত শঙ্কার। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেন কৃষক ন্যায্যমূল্য পান।

উলেস্নখ্য, গত বছরও বোরো ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচের অর্ধেকও পাননি কৃষক। হাওড়াঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় কৃষকের গোলায় সোনা রঙা বোরো ধান গড়াগড়ি খাচ্ছে। কৃষকের মুখে হাসি। কিন্তু হাটে গিয়ে কৃষকের সেই খুশি উবে যাচ্ছে। চালকল মালিক ও সরকারি গুদামে পুরোপুরি ধান না কেনার কারণে ধানের দরপতন চলছে এবং কৃষকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা এমনটি প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ নিতে হবে। জানা গেছে, দেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাট, মাগুরা ও সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকার কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ। এ সব এলাকায় মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে ধান কিনছেন পাইকাররা। কৃষকের অভিযোগ, সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান কিনলেও সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে গিয়ে তাদের পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। আমরা মনে করি, পুরো দমে ধান কাটা শুরু হলেও দাম নিয়ে যে হতাশা উঠে এসেছে কৃষকের, তা আমলে নিতে হবে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঘাম ঝরানো ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন না কৃষক এটা হতে পারে না। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। গত সোমবার স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী হাওড়াঞ্চলের ধানের বাজার পরিদর্শন শেষে ধানের দাম ৭০০ টাকার নিচে শুনে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, বোরো ধান হলো সুনামগঞ্জ হাওড়াঞ্চলের কৃষকদের প্রধান ও একমাত্র অর্থকরী ফসল। বছরের একটি মাত্র ফসল ধান খোরাকির জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে সারা বছর চলতে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। এবার আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন, তার দামের কারণেও ক্ষুব্ধ কৃষকরা। সঙ্গত কারণেই, যত দ্রম্নত সম্ভব সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদোগী হতে হবে। কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে না দামের কারণে, এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। কেননা অনেক কৃষক ঋণ করে ফসল ফলায়। এখন যদি তারা দাম না পায় তবে তার ভয়াবহতাও অনুধাবন করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে