পাঠক মত

পর্যটন শিল্পের বিকাশ জরুরি

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ০০:০০

আরএস আকাশ শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ, ঢাকা
বিশ্বব্যাপী অবসরকালীন কর্মকান্ডের অন্যতম মাধ্যম পর্যটনশিল্প। পর্যটনশিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় সবদেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার, অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষায় একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমন, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করাকে পর্যটন বলা হয়। মানুষ কখনোই এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না, পথ চলাতেই তার আনন্দ। দেশ থেকে দেশান্তরে পরিভ্রমণ করে মানুষ তার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য পিপাসাকে নিবৃত্ত করে। এ পরিভ্রমণকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। পর্যটনশিল্পে বিশ্বের বুকে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ। এ দেশে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বস্তুত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশটি যেন প্রাকৃতিক এক মিউজিয়াম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপমহাদেশের এ দেশটি তাই মন মাতানো, সবুজ শ্যামল, দৃষ্টিনন্দন। সৌন্দর্যমন্ডিত এমন দেশে পর্যটনকেন্দ্র থাকবে না এ কথা বেমানান। ঈদ, পুজো, সরকারি ছুটি কিংবা ঋতুর পরিবর্তন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে জায়গা মেলা ভার। পর্যটন এই কেন্দ্রগুলোতে এত বেশি লোক সমাগমের জন্যই কিছু স্বার্থান্বেষী, সুবিধাবাদী লোক বসে থাকেন কৌশল আঁটে। চাঁদাবাজি, লোক ঠকানোই যাদের প্রধান উদ্দেশ্য। কিছুদিন আগেই পালিত হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল-ফিতর। উৎসব বড় বলেই ৬ বছরের মেয়ের আবদার পূরণ করতে ভ্রমণে বের হন প্রাথমিক এক শিক্ষক জাকারিয়া হুমায়ুন। তিনি জানান, ৬ বছরের মেয়ে পিংকি শীতের মাঝে বায়না করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা যাওয়ার। স্কুল শিক্ষক সামান্য আয়ের বাবার মেয়ের বায়না পূরণের ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য দেখাতে পারেননি! জাকারিয়া হুমায়ুন একপর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন, ভারী কণ্ঠে বলতে থাকেন, এবার ঈদে মেয়ের জন্যই চট্টগ্রামের পতেঙ্গাতে যাওয়া। সেখানে যাওয়ার কিছু সময় পর ক্যামেরা হাতে একজন যুবক ছবি তুলে দিতে চাইলে ২০টি ছবি ৫ টাকা করে উঠানোর চুক্তি হয় উভয়পক্ষের মাঝে। ছবি উঠানো শেষ করে ছেলেটি স্যারকে নিয়ে যায় তাদের কম্পিউটার রুমে, যেখানে আরও ৪ জন ছেলে বসে ছিল। এবার একেকটি ছবি ৮/১০ বার করে ৪০০ ছবি দেখিয়ে জোরপূর্বক ১ হাজার টাকা রাখা হয়। বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। চোখ-জুড়ানো, মন-মাতানো এ দেশ আমার, আপনার গর্ব। অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশ, যার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক লীলাভূমি এ দেশে বিরাজমান। পর্যটন আজকের বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং অতিদ্রম্নত সম্প্র্রসারণশীল শিল্প। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল, গত আট বছরে ৬৬৯৯.১৬ কোটি টাকা পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে আয় হয়েছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটন খাত থেকে প্রতি বছর ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ ৫১টি দেশের পর্যটক আমাদের দেশে আসবেন। এক হিসেবে বলা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষ গড়ে প্রতি বছর ১০ ভাগও যদি ঘুরে দেখে তাহলে বিশাল অংকের অর্থনৈতিক তৎপরতা সৃষ্টি হবে। বিদেশি পর্যটক নির্ভরতা ছাড়াই দেশের পর্যটনশিল্প উন্নয়নের ধারা বয়ে আনবে তখনি যখন নিরুপায় সামর্থ্যহীন বাবার সামর্থ্যটুকু নিয়েও হারানোর সংকোচবোধ থাকবে না, পর্যটনকেন্দ্রে চাঁদাবাজির সম্মুখীন হতে হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎসুকে মেতে ওঠা পর্যটক যেখানে এহেন হেনস্তার স্বীকার হয়, প্রশ্ন জাগে বিশাল অর্থনৈতিক তৎপরতার এ পর্যটনশিল্প তার যথাযথ মূল্যায়ন হারাচ্ছে না তো?