নিবার্চনী প্রচারণায় সংঘষর্

কঠোর হস্তে দমন করতে হবে

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আসন্ন নিবার্চনে প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই যেভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘাত ও সহিংসতার খবর আসছে, তাতে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত না হয়ে পারা যায় না। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন নানা কারণেই গুরুত্বপূণর্। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে। সহিংসতামুক্ত পরিবেশে শান্তিপূণর্ ভোটগ্রহণের আশাবাদ থাকলেও নিবার্চনে সহিংসতা-সংঘষের্র আশঙ্কা যে একেবারে দূর হয়ে যায়নি, তা নিবার্চনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই সামনে এলো। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পরপরই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়েছে। ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। প্রতিপক্ষের দ্বারা ভাঙচুর হয়েছে অপর পক্ষের দলীয় কাযার্লয়। দলীয় কোন্দলও প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্যমান এ পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও শান্তিপূণর্ ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার সংঘষের্র কারণে দেশবাসীও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠিত। এ পরিস্থিতি কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না। তথ্য মতে, সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর মঙ্গলবার প্রচারণায় নামের প্রাথীর্রা। আর প্রথম দিনেই সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনার দুগার্পুর, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, নোয়াখালীর কবিরহাট, রাজশাহী, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, ঠাকুরগঁাওয়ে রাজনৈতিক দলের কমীর্ সমথর্কদের মধ্যে সংঘষর্, গাড়ি ও কাযার্লয় ভাঙচুর এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সমথর্করা যেমন বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেছে, তেমনইভাবে বিএনপির কমীর্-সমথর্করা ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের কাযার্লয়, হামলা করেছে গাড়ি বহরে। হামলার সময় প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। আ’লীগ-বিএনপির সংঘষের্ একজন নিহত হয়েছেন নোয়াখালীর নুরু পাটোয়ারিহাট এলাকায়। ঘটনাগুলো অত্যন্ত আতঙ্কজনক হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। নিবার্চনী প্রচারণার শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলো এরূপ হিংসাত্মক কমর্কাÐের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণের দিন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহতা নিয়ে হাজির হতে পারে, সে আশঙ্কার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে সবর্ত্র। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সাধারণ মানুষও যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোটের প্রচারণার প্রথমদিনে সারা দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সহিংসতার যে চিত্র উঠে এসেছে গণমাধ্যমে; যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, তা কিছুতেই দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে না। সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূণর্ পরিবেশে নিবার্চন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাজনৈতিক দলগুলোর। তারা নিবার্চন কমিশনকে যথাযথভাবে সহযোগিতা করলেই নিবার্চন হয়ে উঠতে পারে উৎসবমুখর এবং প্রশ্নমুক্ত। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার কিংবা আধিপত্য রক্ষায় সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে, রক্তপাত ঘটায়; তাহলে কীভাবে সংশয়হীন হবে নিবার্চনী পরিবেশÑ এ প্রশ্ন অমূলক হতে পারে না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিবার্চনী সংঘষের্র যে ভয়াবহ চিত্র পরিলক্ষিত হলো, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হওয়াও অযৌক্তিক নয়। এ ছাড়া সংঘাত ও সংঘষর্ থেকে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর হতে পারে, মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীতে এক যুবলীগ নেতার প্রাণহানির মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হয়েছে। আমরা মনে করি, নিবার্চন ঘিরে যে কোনো সংঘষর্ ও সংঘাতের ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনকে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করতে হবে। উত্তেজনা সৃষ্টিকারীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সবোর্পরি বলতে চাই, নিবার্চন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সম্পকের্ আগেই আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে সতকর্বাতার্ দিয়েছিলাম। আমাদের সে আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে গত দুদিনে প্রতিপক্ষ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। প্রত্যাশা করব, আরও বড় কোনো অঘটনের আগেই এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর হবে। পরিস্থিতি শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে পরে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। প্রধান নিবার্চন কমিশনার নিবার্চনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হাকিমদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিবার্চনী উত্তাপ যেন উত্তপ্ত না হয়।’ আমরা একই তাগিদ দিতে চাই পুলিশ প্রশাসনকে। যেসব ক্ষেত্রে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রাথীের্দরও বলতে চাই, শান্তিপূণর্ নিবার্চনী প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সহাবস্থানও নিশ্চিত করুন। একটি শান্তিপূণর্ ও সুষ্ঠু নিবার্চন অনুষ্ঠান কেবল নিবার্চন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। সব পক্ষকেই সহযোগিতা ও সহাবস্থানের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখা দরকার, জনগণ শান্তিপূণর্ নিবার্চনই প্রত্যাশা করে।