আওয়ামী লীগের নিবার্চনী ইশতেহার

হাজারো সমস্যায় জজির্রত দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুনিদির্ষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে। শুধু কথা বা কাগজ-কলমেই অঙ্গীকার নয়, বাস্তবায়নেরও পথ দেখাতে হবে। তুলে ধরতে হবে সুনিদির্ষ্ট কমর্সূচি ও কৌশল, তবেই জনগণের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সবার বাসযোগ্য বাংলাদেশ বিনিমার্ণ সম্ভব।

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ডা. এস এ মালেক
দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নিবার্চন। ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। আসন্ন নিবার্চনকে কেন্দ্র করে জনমনে বিপুল প্রত্যাশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে। বতর্মান বৈশ্বিক এবং স্থানিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের টিকে থাকা, সুস্থতা ও উন্নয়নের জন্য জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ একটি বিষয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে জনগণের জন্য ক্ষমতায় গেলে কী ধরনের কাযর্ পরিকল্পনা সম্পাদন করবেন তার একটা পূণার্ঙ্গ বিবরণ দেশ ও জাতির জন্য তুলে ধরবেন। সবার নজর এখন ইশতেহার প্রকাশের দিকে। ভোটারদের কাছে টানতে নানা চমক নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নিবার্চনী ইশতেহারের ¯েøাগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ২০১৪-তে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালের নিবার্চনী ¯েøাগান হচ্ছে ‘গ্রাম হবে শহর’। এতে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, বøু ইকোনমি, তরুণদের ক্ষমতায়ন, দুনীির্ততে জিরো টলারেন্স, নারীবান্ধব কমর্সূচি, বয়স্ক পুনবার্সনসহ গুরুত্বপূণর্ প্রতিশ্রæতি থাকছে। নিবার্চনী ইশতেহার প্রকাশ একটা রাজনৈতিক রেওয়াজ। নিবার্চনে বিজয়ী হলে দেশ ও জনগণের জন্য কি ধরনের কাজকমর্ করা হবে; তা এই ইশতেহার নামক ঘোষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়। এটা করা হয়, এ কারণে যাতে ওই কমর্সূচির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জনগণ তাদের ভোটের বাক্স ভতির্ করে তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসে। যে দল যত গণমুখী তাদের নিবার্চনী ইশতেহার তত সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কমর্সূচি প্রণয়ন করা হয়। নিবার্চনকালীন সময় ঘোষিত কমর্সূচির পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়। ২০০৮ সালে নিবার্চনের পূবের্ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে দিন বদলের চেষ্টা ছিল গুরুত্বপূণর্। সত্য-সত্যই আওয়ামী লীগ পরবতীর্ বছরগুলোতে দিন বদল দিতে সক্ষম হন। সুদীঘর্ ১০ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের যে আথর্-সামাজিক বাস্তবতা বিরাজমান ছিল, তা সম্পূণর্ভাবে মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে দিয়ে এমন গতিসঞ্চার করা হয়েছে যে আজ প্রতিটি মানুষ ভাগ্য পরিবতর্ন শুরু করেছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরন্তর সাহায্য করে যাচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ব্যবস্থাপনা, সড়ক ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন সব যুগান্তকারী পরিবতর্ন আনা হয়েছে, মানুষ এখন সবল, সুস্থ, সক্ষম জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় সবাই তৎপর। দেশরতœ শেখ হাসিনার সরকার দেশের জনগণের জন্য সুদিন বয়ে আনতে পেরেছে; তা দেখে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সরকারকে আগামী নিবার্চনে আবার ক্ষমতায় আনার চিন্তা করছে জনগণ। এবার এমন এক নিবার্চন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করতে যাচ্ছে যাতে সব দল ও মতের অংশগ্রহণ প্রায় সুনিশ্চিত। জনগণের ভোটের ওপর নিভর্র করে তাকে আবার ক্ষমতায় যেতে হবে। এবারের নিবার্চনী ইশতেহার হতে হবে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ও গণমুখী। এই ইশতেহার হতে হবে মানুষের চিন্তা-চেতনা বহনকারী। বাংলার মানুষ অথৈর্নতিকভাবে অনেক এগিয়েছে। এ সরকার যে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম, তা জনগণ খুব ভালো করেই জানে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের মযার্দা পেয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আজ বাংলাদেশ। এরপরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনগণের যে আশা পূরণ হয়নি, তাও বাস্তব সত্য। যেসব ব্যাধি সমাজকে পীড়া দেয়, তার মধ্যে দুনীির্ত অন্যতম। একমাত্র দুনীির্তর কারণেই ২৫-৪০% ভাগ উন্নয়নের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারে না। ধরুন, ১০০ টাকা ব্যয় করে যে উন্নয়নের সুফল পাওয়া যায়, তার পরিমাণ যদি ৯০ ভাগ হয়, তাহলে বলা যায় উন্নয়ন প্রক্রিয়া সফল হয়েছে। যদি ৮০ ভাগ হয় তাও কম নয়। কিন্তু ১০০ টাকা ব্যয় করে যদি ৫০ ভাগ বা তারও নিচে অজর্ন হয়, তাহলে বলতে হবে অনিয়মতান্ত্রিকতা ও দুনীির্ত উন্নয়নকে প্রতিহত করছে। আমাদের বাজেট যদি ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন নিধার্রণ হয়ে থাকে এবং তা ৩০-৪০% অথর্ দুনীির্তর কারণে অপব্যয় হয়, তাহলে উন্নয়ন হবে কি করে। বাজেটের আকার যতই বড় হোক না কেন, দুনীির্ত প্রতিরোধ করতে না পারলে উন্নয়নের গতি স্তিমিত হতে বাধ্য। তাই বাজেটের বৃহৎ আকার দেখে উন্নয়নের আকার বৃহৎ হবে বলে চিন্তা করা ঠিক হবে না। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য জনগণকেই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হবে। আমাদের প্রতিবছর বৈদেশিক বিনিয়োগের যে সুদ দিতে হয়, তাতে বৃহত্তর খুলনা জেলার মতো জেলায় সম্পূণর্ উন্নয়ন তৎপরতা সম্পন্ন করা যায়। ঘুষ, দুনীির্ত, নিয়োগ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য সবকিছু বিবেচনায় নিলে ও কালো টাকার যে পাহাড় আমাদের অথর্নীতির ওপর প্রভাব পড়ছে এবং বিপুল পরিমাণ অথর্ বিদেশে পাচার হচ্ছে; তা বিবেচনায় নিলে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আমাদের উন্নয়ন তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেত। আমরা বিশ্ব অথর্নীতিতে আরও শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন করতে পারতাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি এবং ব্যাংকিং ক্ষেত্রে যে অরাজকতা এখনো বিদ্যমান, জবাবদিহিতার প্রশ্ন এখনো এড়িয়ে যাচ্ছে, তা সামাল দিতে পারলে, আমাদের অথর্নীতি আরও শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারত, সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে এড়িয়ে গেলে; অথর্নীতির ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের সরকারপ্রধান সৎ, দেশপ্রেমিক ও অত্যন্ত সক্রিয় থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তিনি সফলতার সঙ্গে সামাল দিচ্ছেন, তার পরেও বলতে হবে দুনীির্তর বিরুদ্ধে সরকার এত সবল নয়। এই সরকার ও তার দলের লোকজন দুনীির্তর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়েছে। দুনীির্ত নিয়ন্ত্রণে তাই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী ইশতেহারে এরূপ কিছু কথা উল্লেখ থাকলে জনগণ খুশি হয়ে এই সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সরকার গণমুখী ও জনকল্যাণমুখী কাজ করেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই সক্ষমতা নিয়ে। সবের্ক্ষত্রে উন্নয়নের রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন। এ কথাও সত্য দুনীির্ত আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখলে উন্নয়নের আকার আরও ২০-৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেত। সবচেয়ে বড় কথা, যারা এসব অনিয়ম করছেন, তারা জনসংখ্যায় ৫ ভাগও নন। পরোক্ষভাবে হয়তো কিছু কিছু লোক জড়িয়ে পড়ছেন, তবে অধিকাংশ জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাই তারা দুনীির্ত করে জনগণের ভাগ্যের বিপযর্য় ঘটাচ্ছেন, তাদের তা করতে দেয়া যাবে না। সংখ্যায় কম হলেও দুনীির্তবাজরা অত্যন্ত শক্তিশালী। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাই পারেন দুনীির্তর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে। যেভাবে মাদক ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছে, ঠিক তেমন করে ইশতেহারে আগামীতে সরকার গঠন করে এ দেশ থেকে দুনীির্তকে চির বিদায় দেবেন বলে জনগণের প্রত্যাশা। তাই নিবার্চনী ইশতেহার দুনীির্তর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও কঠোর দিক-নিদের্শনা থাকা বাঞ্ছনীয়। সবোর্পরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার থাকতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, বয়স্কভাতা ও প্রতিবন্ধীদের মানবিক কারণে সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি যা ওয়াদা করেন, যেই প্রতিশ্রæতি পালন করেন। শেখ হাসিনার সরকার কতৃর্ক গৃহীত সামাজিক সুরক্ষায় নানাবিধ কমর্সূচির বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের সম্পদ সীমিত কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব দারিদ্র্য দেশের তুলনায় অত্যাধিক। তাই সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে কীভাবে জনসম্পদে পরিণত করা যায় এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতায় অন্তভুর্ক্ত করা যায় এই বিষয়ে নিবার্চনী ইশতেহারে গুরুত্বসহকারে সন্নিবেশিত থাকতে হবে। আমি এই লেখার শেষে এই বলে সমাপ্তি টানতে চাই যে, হাজারো সমস্যায় জজির্রত দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুনিদির্ষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে। শুধু কথা বা কাগজ-কলমেই অঙ্গীকার নয়, বাস্তবায়নেরও পথ দেখাতে হবে। তুলে ধরতে হবে সুনিদির্ষ্ট কমর্সূচি ও কৌশল, তবেই জনগণের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সবার বাসযোগ্য বাংলাদেশ বিনিমার্ণ সম্ভব। এটা আমার মতো বিবেকবান, দেশপ্রেমিক এবং শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের প্রত্যাশা। দেশের সবর্বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, সেই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ডা. এস এ মালেক: কলাম লেখক