পাঠক মত

বিদেশি বিনিয়োগ: প্রতিবন্ধকতার অবসান কাম্য

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বপরিসরে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা চললেও গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া স্বস্তিকর তবে গত বছর পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হলেও তা ভারতের চেয়ে প্রায় ২০ ভাগের একভাগ। গত বছর ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৪০ কোটি ও বাংলাদেশে ২৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার। জাতিসংঘের ব্যবসা সম্পকির্ত সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়ে পাকিস্তানে ১২৮ কোটি, শ্রীলঙ্কায় ৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। পাকিস্তানের বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র এক বছরে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। চীনা বিনিয়োগের কারণেই খাদের শেষ প্রান্তে অবস্থান করা পাকিস্তান তাদের অবস্থান উন্নীত করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশের চেয়ে তারা এখনো অনেক পিছিয়ে। ২০১৬ সাল বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মন্দার বছর হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে দুই শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগে কাযর্ত ধস নেমেছে। এসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশও যেহেতু উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি সেহেতু মহামন্দার দুঃসময়ে ৪.৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রত্যাশিত মানের না হলেও খুব একটা হতাশার নয়। তবে ভারতের চেয়ে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি অস্বস্তিদায়ক। প্রতিবেশী দুটি দেশের একটিতে রমরমা বিনিয়োগ হবে আর অন্য দেশটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে তা যৌক্তিক নয়। আশার কথা চলতি বছর বাংলাদেশে গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিদেশি বিনিয়োগের আশা করছে আঙ্কটাড। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে গ্যাস বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে নজর দিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে শুরু করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ‘সহজে ব্যবসা’র সূচকে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এ দুনার্ম কাটিয়ে উঠতে ব্যবসা ক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে সরকারকে ব্রতী হতে হবে। রাষ্ট্রের অথর্নীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাত। তেমনি আবার শিল্প খাতের অপরিহাযর্ চালিকাশক্তি বিদ্যুত। শিল্প খাতের প্রসার ও শিল্প-উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্প খাতের সুদিন ফেরাতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ যে ক্রমশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে তার বড় উদাহরণ বিদ্যুত খাতে সক্ষমতা অজর্ন। সে সক্ষমতার সুবাদেই আজকে শিল্প খাত সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অথর্নীতির সব সূচক যখন ভালো অবস্থানে রয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ এটা আমাদের জন্য অবশ্যই আশার খবর। এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে, আছে অনেক বাধা, আছে বিপুল বিঘœ তবু এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আছে শত্রæতা, আছে উল্টোগাড়ির অপচালক- তবু সঠিক পথে অগ্রসরমান আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের পরীক্ষাগার’- এ জাতীয় শ্লেষ ও বিদ্রƒপ গায়ে না মেখে মানুষ আত্মশক্তি অজের্নর পথে এগিয়ে বিশ্বমানচিত্রে মযার্দার আসনে স্বদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাম্প্রতিককালে আন্তজাির্তক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতিও মিলেছে। নিদির্ষ্ট কয়েকটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, তৈরি পোশাক শিল্প এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে আগের তুলনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ফুড প্রোডাক্ট এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে কী উপায়ে আরও বিনিয়োগ আনা যায় এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি খাত শনাক্ত করে পরিকল্পিতভাবে সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেসব খাতেও বিনিয়োগ আনা অসম্ভব হবে না। বতর্মান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অথৈর্নতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাযর্ক্রমও বাস্তবায়ন করছে। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা নিদির্ষ্টভাবে কোন বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা বলে গণ্য করছে সেগুলো শনাক্ত হওয়া জরুরি। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে অপপ্রচার রোধে কাযর্কর ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বতর্মানে দেশের সাবির্ক পরিস্থিতি ভালো। বিনিয়োগের জন্যও যে এটি সুবণর্ সময়, এই যুক্তিগুলো ছোট ও বড় সব স্তরের বিনিয়োগকারীর সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই। ইফতেখার আহমেদ টিপু ঢাকা।