ডেঙ্গু আতঙ্ক

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চলছে বর্ষা মৌসুম। আবারও জনমনে ডেঙ্গু আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৩ জন। এ নিয়ে সারাদেশে মোট ১২৮ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নতুন আক্রান্তদের সবাই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩ জন। চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সর্বমোট এক হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৯৬০ জন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। ওই বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল, মৃতু্যর সংখ্যাও ছিল বেশি। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৩৯২ জন, মারা গিয়েছিলেন তিনজন। ২০২১-এ সারাদেশে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৫ জন। এবারও অবস্থা উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে মশার উৎস খুঁজতে ড্রোনের মাধ্যমে আগামী শনিবার থেকে টানা দশ দিন চিরুনি অভিযান চালাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডেঙ্গু আতঙ্কের মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা আশা করছি, মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশন অভিযানের ব্যাপারে তৎপর হবে। অভিযান সঠিকভাবে চালালে, অভিযানে মশার লার্ভা নষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলতে পারে। বৃষ্টির কারণে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পায় এবং লার্ভার ঘনত্ব বেড়ে যায়। লার্ভার ঘনত্বের কারণে কিছু কিছু এলাকা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকে। ভুলে গেলে চলবে না, কিছুদিন বিরতির পর নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে পারে। নির্মাণাধীন ভবন, খালি কনটেইনারে লার্ভার উপস্থিতি থাকে। এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বালতি, বোতলে কিংবা কোনো পাত্রে পানি যেন জমতে না পারে এ জন্য কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের খেয়াল রাখতে হবে। ৫০ বছর আগেও ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষ তেমন জানতেন না। কিন্তু পরে এটি ধীরগতিতে এগিয়ে মহামারিতে রূপ নেয়। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন বছরে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর আগ্রাসন বাড়ার কারণে জনমনে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত আড়াই বছর দেশ করোনা সামাল দিতেই হিমশিম খেয়েছে। ফলে সঠিকভাবে মশক নিধনের বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। দুই সিটি করপোরেশনের উচিত আগে থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানোর কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু করা। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।