পাঠক মত

সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য চাই মাদকমুক্ত পরিবেশ

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সভ্যতার অগ্রগতির ধারা যতই বেগবান হচ্ছে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো ততই উন্নততর আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় পালস্না দিতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলো। জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম না হওয়ায় অনাধিক্যের ভারে নু্যব্জ হয়ে পড়েছে। বেকারত্ব আর হতাশা জীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আর সুযোগ গ্রহণ করছে সাম্রাজ্যবাদী, ব্যবসায়ী, পুঁজিবাদীচক্র। সমাজ জীবনে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। সবার, জাতি তথা দেশ থেকে দৌড়ে পালাচ্ছ্তেকল্যাণ, সুন্দর ও ঐশ্বর্য। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে অসুন্দর, অকল্যাণ, হতাশা আর ব্যর্থতা। সমাজ তথা জাতির আলোর পথের যাত্রী যুব সমাজ আজ হতাশার চোরাবালিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। শিক্ষা-সংস্কৃতি তলিয়ে যাচ্ছে ঘোর অন্ধকারে। হতাশা আর ব্যর্থতায় জর্জরিত যুবক শ্রেণি মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে শান্তি খুঁজেছে নেশার ঘোরে। ফলে যুব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ মাদকের থাবা বসেছে। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা আজ লেখাপড়া ছেড়ে মাদকের কুপ্রভাবে আসক্ত হয়ে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে। যুবসমাজের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি। আগামী দিনের সোনালি ফসল আসবে যাদের ছোঁয়ায়, যারা গড়বে আগামীর পৃথিবী তারাই আজ তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের অতলে। আজকের পৃথিবীর সব মানুষকে অনুরোধ করছি একবার স্থির হয়ে একটু দাঁড়িয়ে ভাবুন বিশ্বের প্রতিটি দেশে মাদকদ্রব্য কীভাবে আজ আগ্রাসী থাবা বসিয়েছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে আর জাতির তথা দেশের কল্যাণ শক্তির মূর্তপ্রতীক যুবসমাজকে। তাই ধ্বংসের হাত থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে মাদকবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বস্তরের জনসাধারণকে সচেতন করে তুলে মাদকবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। প্রতিটি বাবা-মা-এর তাদের সন্তানের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে, নিয়মিত তাদের খোঁজ রাখতে হবে তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, তাদের বন্ধু-বান্ধবরা কেমন এ সব বিষয়ে। তাহলে এই সমাজ, জাতি দেশ তথা পৃথিবী মাদক মুক্ত হবে। সাকিবুল ইসলাম শিক্ষার্থী সমাজকর্ম বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা সংকটে পড়তে পারে মানবজাতি কথায় বলে, সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। বৈশ্বিক করোনা মহামারি যেন আমাদের আবারও বুঝিয়ে দিল পৃথিবীতে টিকে থাকতে সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। করোনা মহামারিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য হাজারো মানুষের আর্তনাদ আমরা দেখেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য বলতে আমরা কি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ১৯৪৮ সালে ঘোষিত সংজ্ঞা অনুসারে স্বাস্থ্য বলতে সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক মঙ্গল বা কল্যাণবোধকে বোঝায়। শুধু রোগ বা দুবর্লতার অনুপস্থিতিকে স্বাস্থ্য বলে না। স্বাস্থ্য শারীরিক, মানসিক এবং সুস্থতার যোগফল যেখানে রোগ এবং অসুস্থতা অনুপস্থিত। মানব সমাজে ব্যক্তির টিকে থাকা তার স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। একটি সুস্থ সবল দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অতি জরুরি। সম্প্রতি গবেষকরা স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা হিসেবে একটি নতুনত্ব যোগ করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে স্বাস্থ্য হচ্ছে নতুন নতুন বাধা এবং দুর্বলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুস্থভাবে জীবনযাপন করা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যধিক উন্নয়নের ফলে এখন শুধু নিরোগ থাকাকেই স্বাস্থ্য বলে না। সব প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুন্দরভাবে শরীর ও মন পরিচালনা করাকে স্বাস্থ্য বলে। অতএব, স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যকেই বোঝায়। এই দুই ধরনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অতি জরুরি। শারীরিক স্বাস্থ্য বলতে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত অর্থাৎ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিজস্ব নিয়মে কাজ করাকে বোঝায়। প্রতিটি কাজ সুস্থভাবে সম্পন্ন করার জন্য শারীরিকভাবে সবল এবং কর্মক্ষম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন করে তার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। কারণ এটা শুধু তার নিরোগ থাকা নয়, বরং সঠিক খ্যাদ্যাভাস, পরিমিত ঘুম, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং শারীরিক ব্যায়ামের যোগফল। এ ছাড়া পরিবেশগত, জৈবিক, সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলোও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সঠিক খ্যাদ্যাভাস, নিয়মিত অনুশীলন এবং স্বাস্থ্য সেবাতে অ্যাক্সসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে এবং রোগ-প্রতিরোধে জয়ী হতে পারে। শারীরিক সুস্থতার উপর মানুষের দৈহিক গঠন নির্ভর করে। শারীরিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানসিক সুস্থতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে একটি ভালোর অবস্থা যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব দক্ষতা উপলব্ধি করে, জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবিলা করতে পারে, উৎপাদনশীল এবং ফলদায়কভাবে কাজ করতে পারে। একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য তার শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতা শারীরিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতার মতোই বাস্তব। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ফলেই তরুণ সমাজ আত্মহননের মতো পথ বেছে নেয়। অকালে ঝরে যায় হাজারো তাজা প্রাণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, ইতিবাচক মনোভাব তৈরি, নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, কানেক্টিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়। মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। সবসময় হাসিখুশি থাকা এবং নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকার মাধমে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব। আমাদের জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য। অনেক তো মৃতু্যর মিছিল দেখলাম এই মহামারিতে। আসুন আমরা এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সচেতন হই। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাই। অন্যথায় পৃথিবীতে এমন দিন আসতে খুব বেশি দেরি নেই, যে দিন ডাইনোসরের মতো মানুষের অস্তিত্বও সংকটের মুখে পড়বে। রাজিয়া আক্তার রিমু শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়