শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুঃখী দেশের তালিকায় সপ্তম

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি জরুরি, তেমনিভাবে দেশের মানুষের মানসিক পরিস্থিতি অর্থাৎ তারা কতটা ক্ষুব্ধ ও দুঃখী কিংবা অবসাদগ্রস্ত সেই বিষয়গুলোকেও আমলে নেওয়া আবশ্যক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুব্ধ, দুঃখী এবং অবসাদগ্রস্ত দেশের তালিকায় সপ্তম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপের চালানো এমন এক সমীক্ষার ফল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, এতে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৫ পেয়ে সপ্তম দুঃখী দেশ নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে, ৫৯ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দুঃখী দেশ হয়েছে তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান।

সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, গ্যালাপ-২০২২ গেস্নাবাল ইমোশনস রিপোর্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে মার্কিন সংস্থাটি বলেছে, নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকে যে দেশের স্কোর যত বেশি, সেই দেশের জনগণের বেশির ভাগই এসব আবেগের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে গত ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট এক হাজার মানুষ সরাসরি এই জরিপে অংশ নেন। এছাড়া বিশ্বজুড়ে এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন ১২২টি দেশের এক লাখ ২৭ হাজার মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, ২০২০ সালের তুলনায় গত বছরটি তাদের কাছে বেশি চাপের ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৪২ শতাংশ বলেছেন, তারা অনেক বেশি উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই উদ্বেগের পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর প্রায় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি যে, একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুব্ধ, দুঃখী এবং অবসাদগ্রস্ত দেশের তালিকায় সপ্তম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ- অন্যদিকে, এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে যে, ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর প্রায় দুই শতাংশ উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গত কারণেই, কেন এত বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে নজিরবিহীন নেতিবাচক আবেগ দেখা যাচ্ছে, তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, উদ্বেগ বৃদ্ধি তথা অবসাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়লে কিংবা মানুষ যদি দুঃখী অনুভব করে তবে তা সহজ ভেবে এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি তখনই অর্জিত হবে, যখন মানসিক পরিস্থিতিও উন্নত হবে, মানুষ সুখী অনুভব করবে এবং জীবনযাত্রায় উদ্বেগ হতাশা কিংবা অবসাদ কমে আসবে। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অসুখী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংকট রয়েছে- দারিদ্র্য, ত্রম্নটিপূর্ণ সম্প্রদায়, ক্ষুধা, একাকিত্ব এবং ভালো কাজের অভাব। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

এছাড়া উলেস্নখ্য যে, গ্যালাপ-২০২২ গেস্নাবাল ইমোশনস রিপোর্ট শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকে জরিপে অংশ নেওয়া প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে তিনজনের বেশি মানুষ বলেছেন, তারা অনেক বেশি শারীরিক ব্যথার মুখোমুখি হয়েছেন। এ ছাড়া চারজনের মধ্যে একজন দুঃখ এবং কিছুটা কম রাগের মুখোমুখি হয়েছেন। উলেস্নখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন আফগানিস্তানের জনগণ। দেশটির নেতিবাচক সূচক স্কোর ৩২; যা ১৬ বছর আগে গ্যালাপের জরিপ শুরু করার পর থেকে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, ইতিবাচক সূচক স্কোর ৮৫ পেয়ে সবচেয়ে কম চাপের দেশ নির্বাচিত হয়েছে পানামা। এছাড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে কিছুটা দুঃখ, উদ্বেগ এবং চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে লোকজন সেই তুলনায় কিছুটা কম রাগান্বিত ছিলেন।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুব্ধ, দুঃখী এবং অবসাদগ্রস্ত দেশের তালিকায় সপ্তম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ- এই বিষয়টি সামনে রেখে দেশের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। ফলে এর পাশাপাশি মানসিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেও কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্ব এখন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি এবং করোনাভাইরাসের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করছে- এগুলোও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে