জুনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৪

যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। গত জুন মাসে দেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত আরও ৮২১ জন। তাদের মধ্যে ২০৪ জনই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়- যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সোমবার এক প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এর আগে মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৬৪ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৮৪ জন ও শিশু ৯৭ জন। এর মাঝে ২৪৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭৯ জন- যা মোট নিহতের ৪৩.৫২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন- যা মোট নিহতের ১৮.৫৬ শতাংশ। এটা সত্য, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত অবৈধ চালক ও চালকের অসতর্কতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও খামখেয়ালিপনা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়কের ভঙ্গুর অবস্থা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তেমন ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাসচালক ও চালকের সহকারীদের খামখেয়ালির কারণে নিরীহ ছাত্রছাত্রীসহ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। তাদের কবল থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। চালকদের আরও সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে চালকরা কোনোভাবেই যাতে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশদের আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল হতে বলেছেন আদালত। আদালতের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করছি। রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর রাজীবের মৃতু্যর ঘটনা এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। এরই মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি জেলায়। গত ১৫ বছরে সড়ক পথে ৫৫ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে। ৭০ হাজার মামলাও হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। অন্যদিকে রাজধানীতে বছরে ১৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনায়। মানুষের জীবন যে কত তুচ্ছ তা এসব ঘটনার দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো। যোগ্য ও দক্ষ লোকরাই যেন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিআরটিএর। যদি যোগ্য লোককে লাইসেন্স দেয়া হয় তা হলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে।