পাঠক মত

শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ওসমান গনি সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মা-বাবা সন্তানাদি নিয়ে গঠিত হয় একটি পরিবার। প্রতিটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী পরিবার দেশ ও সমাজ গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুখী সমৃদ্ধশালী পরিবার গঠনে বিশাল ভূমিকা পালন করে পরিবারের মা-বাবা। পরিবারের প্রতিটি শিশুই তার আপন পরিবার অর্থাৎ মা-বাবার নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করে থাকে। পরিবারের মা-বাবার সঠিক আচার-আচরণের উপর নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন। শিশুর সুস্থ মস্তিষ্ক ও বেড়ে ওঠাও তার ভবিষ্যৎ জীবন সবটাই নির্ভর করে পরিবারের উপর। তাই সাংসারিক জীবনে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে মা-বাবাকে শিশুর প্রতি হতে হবে নমনীয়। যে সংসার জীবনে মা-বাবার মধ্যে সবসময় ঝগড়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অশালীন ভাষা বিনিময় হয় শিশুর সামনে তা দেখে দেখে শিশুরা শেখে। শিশুরা কথা বলতে না পারলেও তাদের মনের মধ্যে এর প্রভাব বিস্তার করে। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে তার দৈহিক গঠন ও মন-মানসিকতারও একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তখন সে তার পরিবারের সমস্ত কার্যাবলি আস্তে আস্তে রপ্ত করতে থাকে। আর মন-মানসিকতার দিক দিয়ে সে বদমেজাজি ও খিটখিটে মেজাজের হয়ে ওঠে। অঙ্কুুরেই ধ্বংস হয়ে যায় তার ভবিষ্যৎ জীবন। শিশুর সামনে মা-বাবার অখেয়ালিপনা ঝগড়ার কারণে নষ্ট হয়ে যায় শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন। তাই মা-বাবাকে শিশুর সামনে খারাপ আচরণ করা থেকে নীরব থাকতে হবে। বাবা-মা যখন তর্কাতর্কি এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন শিশুরা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। অসহায় বোধ করে, লজ্জা পায়। মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। নিজেকে তার অযোগ্য মনে হতে থাকে। ফলে এই তীব্র মানসিক চাপ থেকে শিশু একধরনের হীনম্মন্যতায় ভোগে। আত্মবিশ্বাসের অভাব তার মধ্যে সৃষ্টি হয়, যার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বড় হয়ে তার কর্ম এবং ব্যক্তিজীবনেও। অনেকসময় বাবা-মায়েরা মনে করেন, তাদের ঝগড়াঝাটিতে অবুঝ শিশুদের মনে কোনো রেখাপাত করে না ভাবেন, হয়তো বাচ্চারা কিছু বুঝেই ওঠেনি। আড়ালে ঝগড়াঝাটি হলে শিশুরা সেটার কিছুই বুঝতে পারে না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর ছয় মাস বয়স থেকেই পিতা-মাতার ঝগড়ার প্রভাব পড়া শুরু হয় শিশুমনে। দুই বছর বয়স থেকে শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের আচরণ খেয়াল রাখতে শুরু করে। বাড়িতে যখন তারা বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো ধরনের সহিংস সম্পর্ক দেখে, তখন তাদের হৃদকম্পন বেড়ে যায়। এ থেকে তার মানসিক চাপ তৈরি হয় এবং হরমোনজনিত সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে শিশুর। পাশাপাশি, এতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টাতে পারিবারিক কলহ শিশুর ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কী রকম হবে, পড়ালেখায় সে কেমন করবে, এমনকি ভবিষ্যতে শিশু যেসব সম্পর্কে জড়াবে, সেগুলো কেমন হতে পারে ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে পারিবারিক কলহ। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক কেমন, এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক। সবদিক বিবেচনা করে স্বামী-স্ত্রীর উচিত একজন আরেকজনকে বুঝে চলা। কোনোভাবেই একে অন্যকে সন্দেহ করা যাবে না। পারস্পরিক সম্পর্কে ইগো, ছিদ্রান্বেষিতা পরিহার করতে পারলে যে কোনো সংসারে কলহ-বিবাদ কমে যাবে। এতে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সবল, বিবেকসম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠবে। পরিশীলিত, বিনয়ী ও শান্তিপ্রিয় জাতি গড়তে এবং আগামী দিনে সুনাগরিক হয়ে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে আমাদের শিশুদের আমাদের নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। সন্তানেরা বন্ধু-বান্ধব বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার শিকার হয়ে বিপথগামী হলে শুরুতেই তাকে তিরস্কার না করে সময় দিন। আমাদের সন্তানদের শৈশব হোক সুন্দর, মধুময়। মুক্ত থাকুক তারা সকল কলুষতা থেকে। ভুলে গেলে চলবে না সন্তানরা ভালো থাকলে ভালো থাকবে পরিবার, ভালো থাকবে দেশ, তথা বিশ্ব।