পাঠক মত

নিবার্চনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের ডামাডোল বেজে উঠেছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া শুরু করেছে প্রাথীর্রা। শহর থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের আড্ডায় আলোচনার প্রধান ইস্যু নিবার্চন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায় ভোটাররা। সবার প্রত্যাশা একটি নিরপেক্ষ নিবার্চন। গণতন্ত্রের পূবর্ শতর্ও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন। গণতন্ত্রে নিবার্চনের মাধ্যমেই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। সবার দৃষ্টি এখন নিবার্চনের দিকে, কারণ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন প্রাক্তন সব নিবার্চনের চেয়ে একটু ভিন্ন। তত্ত¡াবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নিবার্চনে অংশ গ্রহণ করেনি। কিন্তু সেই বিএনপিই ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে দলীয় সরকারের অধীনে ইতোমধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। সরকারি দলও নিবার্চনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে সব দল মাঠে সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে কিনা এ নিয়ে জনমনে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা নিবার্চনী প্রচারণার তিনদিনের মধ্যেই মূতর্ হয়ে উঠেছে। সরকারি দলের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের আলোচনায় সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত থাকবে এবং নিবার্চনী প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল সরকারি কোনো সুবিধা নেবে না বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় দিনেও দেশের ১৮ জেলায় বিরোধী জোটের প্রাথীের্দর প্রচারণায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর। তৃতীয় দিনেও সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় ধানের শীষের সমথর্ক ও প্রাথীর্র গাড়িবহরে আ.লীগের নেতাকমীর্রা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিক‚লতার মধ্যে প্রচারণায় অংশ নিলেও নানা প্রতিরোধ, হামলা, ভাঙচুর ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হয় তাদের। আওয়ামী লীগ বিএনপির সংঘষের্ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। নিবার্চনী প্রচারণা শুরু হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা সুষ্ঠু নিবার্চনের অন্তরায়। নিবার্চনী তফসিল ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী নিবার্চনী এলাকা থাকা অবস্থায় সরকারি কোনো সুবিধা নেবেন না বলা হলেও তিনি পুলিশ প্রটোকল নিয়ে জোরেশোরে নিবার্চনী প্রচারণা করছেন। সব দল অংশ নিলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে কেউ কেউ নিবার্চনী প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল রাস্তায় বের হলেই হামলা, মামলা, ভাঙচুরের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে অতীতের সব নিবার্চন যে এর থেকে ভিন্ন তা নয়। বরং যে দলই ক্ষমতায় এসেছে তারাই বিরোধী দলের ওপর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এটাই এদেশের রাজনৈতিক কালচারের সবচেয়ে খারাপ দিক। সুস্থ গণতন্ত্র চাচার্র খাতিরে সব রাজনৈতিক দলকে এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিবার্চন কতটা সুষ্ঠু ও সহিংসতা মুক্ত হবে তা নিশ্চিত করতে পারে ক্ষমতাসীন সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি যে অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা দূর করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এর পুরো দায়িত্ব সরকার ও নিবার্চন কমিশনের ওপর বতার্য়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নিবার্চন কমিশনকে তেমন ভ‚মিকায় দেখা যাচ্ছে না। একটি অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের স্বাথের্ বিরোধীরা যাতে নিভের্য় নিবার্চনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন, প্রাথীর্রা যাতে গ্রেপ্তারের মুখোমুখি না হন, নেতাকমীর্রা যাতে নতুন মামলার মুখে না পড়েন এবং ভোটাররা যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়গুলো নিবার্চন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা না যায় তাহলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না কমে আরও বাড়বে। শুধু একটি বা দুটি নয়, নিবার্চন সুষ্ঠু করতে সব দলকেই শান্তিপূণর্ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আসন্ন জাতীয় নিবার্চন শান্তিপূণর্ করতে সবার একত্রে কাজ করতে হবে। শফিকুল ইসলাম শিক্ষাথীর্, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়