পোশাক খাতে ইতিবাচক প্রভাব

এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের পোশাক খাতে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ খাত ঘিরে নানান সময়ে মন্দার বিষয়টিও সামনে এলেও খাতটি এখন ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের ইতিবাচক প্রভাবেই পড়ছে তৈরি পোশাক খাতে। ইতোমধ্যে পোশাকশিল্পে কাযাের্দশ এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগও (এফডিআই) আশানুরূপ। আর এ তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অথর্নীতি ও সামাজিক কমিশনের (ইউএন-এসকেপ) এক প্রতিবেদনে। পাশাপাশি চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে তা বিশ্ব অথর্নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও সতকর্ করেছে সংস্থাটি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সস্তা শ্রমের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশকে রাখলেও এ খাতে অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সমস্যার কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে উচ্চস্তরে পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি। বিশ্লেষকরা এখনো বলছেন, বিশ্বের অন্যতম পোশাক প্রস্তুতকারী দেশ চীন যে উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ সে ধরনের পোশাক প্রস্তুত করে না। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পেতে হলে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা জরুরি বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদিত না হলে উদ্যোক্তারা ভিয়েতনামের দিকে চলে যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। যেহেতু প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে দীঘের্ময়াদে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকা সত্তে¡ও ২০১৭ সালে ৪২২ মিলিয়ন সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে; যা এর আগের বছরের তুলনায় এক শতাংশ বেশি। ফলে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কাযর্কর উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়। এটা স্পষ্ট যে, উন্নয়নশীল দেশগুলো বিনিয়োগ আকষর্ণ করতে পারে মূলত সস্তা শ্রমের সহজলভ্যতার জন্য। বিশেষত পোশাকশিল্পে এই সুবিধা বেশি। আর জাতিসংঘ যেহেতু আশঙ্কা করছে, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব অব্যাহত থাকলে তাতে বৈশ্বিক জিডিপি ১৫০ বিলিয়ন ডলার এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৪০ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এতে শ্রমঘন অনেক প্রতিষ্ঠানেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটি বিবেচনায় রেখেই বলতে চাই, এই সতকর্বাতার্ আমলে নিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করাও জরুরি। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখাও জরুরি যে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি জোগান দেয় তৈরি পোশাকশিল্প খাত। এর আগে বিপণন উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তা দেশের কাছাকাছি শিল্প স্থানান্তরের কথা তুলেছিল। ফলে যদি শিল্প-মালিকরা নিয়ারশেরিং বা ভোক্তা দেশের কাছাকাছি শিল্প স্থানান্তর এবং অটোমেশন বা যান্ত্রিকীকরণের দিকে ঝুঁকে যান; তাহলে, পোশাক খাতের সমীহজাগানিয়া ও আধিপত্য হারাতে পারে বাংলাদেশÑ এমন আশঙ্কার বিষয়টি সামনে আছে। আর এসব আশঙ্কার নিরসনকল্পে সরকার, উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের এমন উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে এ খাতের ওপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। মনে রাখা জরুরি, বিশ্ববাণিজ্যে দিন দিন উত্তেজনা বাড়ছে। বাড়ছে প্রতিযোগিতা। আর বৈশ্বিক এ প্রতিযোগিতায় সামিল হয়ে টিকে থাকতে হলে সময়োপযোগী কমর্পরিকল্পনা নেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। আমরা মনে করি, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা চাইলে এসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে পরবতীর্ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে পারে। যেহেতু জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে জোরেশোরে বাণিজ্যযুদ্ধ চলার কারণে বাড়তি খরচের হাত থেকে বঁাচতে মাকির্ন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান পোশাকের ক্রয়াদেশ দিতে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। পুরনো ক্রেতার সঙ্গে আসছে নতুন নতুন ক্রেতাও। পুরনো ক্রেতারা আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পযর্ন্ত ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ও শিগগিরই বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা চাই, চীনা পোশাকের ব্যবসা আসতে শুরু করায় দেশীয় কারখানায় ক্রয়াদেশ বাড়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিক। পাশাপাশি এ ধারা যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে জন্য উচ্চমূল্যের পোশাক প্রস্তুতে দক্ষ কমীর্বাহিনী গঠনের যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তাও আমলে নিতে হবে। প্রত্যাশা থাকবে, শিল্প-খাতের অথৈর্নতিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করুকÑ যাতে তৈরি পোশাকশিল্পে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা না থাকে।