আগামী সেপ্টেম্বর থেকে লোডশেডিং কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। রোববার বিদু্যৎ ভবনে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামনের মাস থেকে বিদু্যৎ বিভাগ চিন্তা করছে, আস্তে-আস্তে লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। আমরা মনে করছি, এখন যেটা আছে, আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থা হবে। আগামী মাস থেকে আমার মনে হয় বিদু্যৎ বিভাগ অন্তত অর্ধেকের বেশি লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসবে। আমরা আস্তে-আস্তে আমাদের গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে নিয়ে আসব, কিছুটা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করব। ব্যালেন্স করে হয়তো অক্টোবর থেকে আমরা পুরোপুরি আগের অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের দিকে যেতে পারব।
এটা সত্য, লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিদু্যৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত এক মাস ধরে লোডশেডিং চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে জনভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে, অন্যদিকে আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নিত্যপণ্যের দামসহ জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িঘরে বিদু্যতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়া জরুরি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদু্যৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। শহরের কোনো কোনো এলাকায় ৪-৫ বারও লোডশেডিং হচ্ছে। আর গ্রামের কথা তো বলাই বাহুল্য। গ্রামে গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা বিদু্যৎ থাকে না।
লোডশেডিংয়ে যেমন জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, তেমনি উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়- যার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ জড়িত। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, গ্যাস-বিদু্যৎ সংকটের দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সারাবিশ্বেই জ্বালানি সরবরাহে বিরাট এক সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানির এমন উচ্চমূল্য অনেক দেশের কাছেই বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আর যে কারণে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর পক্ষে এই মুহূর্তে বেশি দামের জ্বালানি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সংকটের এই চক্রে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরাও চাই লোডশেডিং কমে আসুক। জনজীবনে ও শিল্পকারখানায় স্বস্তি ফিরে আসুক। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে এ সমস্যার যৌক্তিক সমাধান দিতে।