চট্টগ্রামে ১২০ পাহাড় বিলুপ্ত

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। কোনো কর্মকান্ড যদি পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয় তবে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে রাখা জরুরি, পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে জীবন ও সম্পদ দিয়েই সেই দায় শোধ করতে হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। ৪০ বছর আগে ওই এলাকায় ২০০টি পাহাড় থাকলেও ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে। মূলত, শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা দরকার, ইংরেজ শাসনের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ের সংখ্যা কমেছে। স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে। একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি। এর পরের ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন। ২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলি, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার, মতিঝরনা, ষোলোশহর ও ফয়'স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ১৯৭৬ সালে নগরের পাঁচ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক শূন্য দুই বর্গকিলোমিটার। এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়। এটা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। নগরের বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি ও পাহাড়তলি থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয়। সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ কাটা পড়ে পাঁচলাইশে। ৪০ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ পাহাড় ছিল, যার ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত কেটে কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্ণফুলী, হালদা ও সাংগু দখল, দূষণ, ভরাট, চর জাগা এবং পরিকল্পিত ড্রেজিং না করায় ভয়াবহ হুমকির মুখে। তখন পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পাহাড় কাটা, পাহাড় ধ্বংসের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে তার ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ভুলে যাওয়া যাবে না, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বনজঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বনজঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পাহাড় ধসের পথ সুগম হয়। আর পাহাড় ধসের কারণে প্রাণ হারায় মানুষ। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে- এটাকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এমনটি কাম্য।