তিউনিসিয়া : আরব বসন্ত ব্যর্থ, ফিরছে একনায়কত্ব!

পার্লামেন্ট স্থগিত করার এ বছরের মাথায় কায়েস সাইদ নতুন সংবিধান প্রশ্নে তথাকথিত গণভোটের আয়োজন করেন সম্প্রতি। নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। কায়েসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বা এই গণভোট প্রতিরোধ কার্যকর কিছু করতে পারেনি আন নাহদা বা কোনো দল। তবে গণভোটে ভোটার উপস্থিতি কম করাতে দলগুলো সক্ষম হয়েছে।

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

আহমদ মতিউর রহমান
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরল সংগ্রাম করে নাম করেছে তিউনিসিয়ার সংগ্রামী জনতা। পশ্চিমের গণতন্ত্রীরা তার নাম দিয়েছে আরব বসন্ত। সেই ধারায় তিউনিসিয়ায় পতন হয় স্বৈরশাসক জায়নুল আবেদীন বেন আলির। একই ধারায় পতন হয় মিসরের একনায়ক হোসনি মোবারকের, লিবিয়ায় পরিরবর্তন আসে, সিরিয়ায় আন্দোলন হয়। হয়তো আরো বহু স্থানেই এরকমটা হতো যদি না সে সব দেশের সরকার কঠিন ব্যবস্থা না নিত। এখন মনে হচ্ছে আরব বসন্তের নামে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল তিউনিসিয়ায়, ১১ বছর পরে এসে তা ব্যর্থই হতে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে যে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুরু হয়েছিল- তার সূচনা ছিল এই তিউনিসিয়াতেই। তিউনিসিয়া আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত রাষ্ট্র। ১৮৮১ সাল থেকে তিউনিসিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৬ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। আধুনিক তিউনিসিয়ার স্থপতি হাবিব বোরগুইবা দেশটিকে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং ৩০ বছর ধরে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিউনিসিয়া উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম; প্রায় সব তিউনিসীয় নাগরিক মুসলিম। হাবিরের পর ক্ষমতায় আসেন জায়নুল আবেদিন বেন আলি। ১৯৮৭ সালের ৭ নভেম্বর তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং আরব বসন্তের আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালে ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়েন। সম্প্রতি তিনি পরলোক গমন করেন। দীর্ঘকালীন শাসক হওয়ার কারণে বেন আলি স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন এবং জনপ্রিয়তা হারান। তাকে হটাতেই আরব বসন্তের সূচনা। সেখান থেকে দাবানলের মতোই গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আরব বিশ্বের এক বিরাট অংশ জুড়ে, আর পরের কয়েক মাসে পতন ঘটেছিল ওই অঞ্চলের কয়েকটি শাসকচক্রের। কিন্তু ১১ বছর পর আজ সেই আরব বসন্তের সুতিকাগার তিউনিসিয়া পতিত হয়েছে গুরুতর সংকটে- যদিও সেই পট পরিবর্তনের পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একমাত্র এই দেশটিই সাফল্য পেয়েছিল। গত বছর জুলাইয়ের ২৫ তারিখ তিউনিসিয়ায় তৈরি হয় এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিশেম মেচিচিকে বরখাস্ত করেন, স্থগিত করেন পার্লামেন্ট। এটি ছিল এমন এক পদক্ষেপ- যাকে সাইদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ- বিশেষ করে মডারেট দল আন নাহদার নেতৃত্বাধীন দেশটির ইসলামপন্থিরা এক 'বিপজ্জনক অভু্যত্থান' বলে আখ্যায়িত করেন। প্রেসিডেন্ট সাইদ অবশ্য সংবিধান উদ্ধৃত করে বলেছেন, দেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাকে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা তারই অংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপের উত্তর আফ্রিকা সংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো ফ্যাবিয়ানি বলেছিলেন, 'প্রেসিডেন্টের এসব পদক্ষেপ ২০১১ সালের বিপস্নবপরবর্তী কালে তিউনিসিয়ায় গুরুতর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে তা অনিশ্চিত এবং প্রেসিডেন্ট সাইদের পদক্ষেপকেও মনে হচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রার মতো।' এক বছর পর তথাকথিত গণভোটের নাম করে কায়েস সাইদ জনগণকে আবার সেই বেন আলির বিবরেই কার্যত ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কি কারণে সাইদের এই উদ্যোগ? তিউনিসিয়ায় তখন একদিকে চলছিল করোনাভাইরাস মহামারির ব্যাপক বিস্তার- আর অন্য দিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সামাজিক অস্থিরতা এবং গণঅসন্তোষ- সব মিলিয়ে এক নজিরবিহীন সংকটে পড়েছিল দেশটি। উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ তিউনিসিয়া এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আরব বিশ্বে এ দেশটিকে দেখা হয় গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা হিসেবে। তিউনিসিয়াকে মনে করা হয় একমাত্র আরব দেশ- যাতে একটা স্তর পর্যন্ত গণতন্ত্র ছিল। অবাধ নির্বাচন হয়ে আসছিল, লোকজন জেলে যাওয়ার ভয় ছাড়াই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাতে পারত। বিপস্নবের পর কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে, তাতে জয়লাভ করে রশিদ ঘানুচির ইসলামপন্থি দল- আন নাহদা ক্ষমতায় গেছে, হেরে আবার বিরোধী দলেও গেছে। পরের নির্বাচনে জোট করে সরকার চালাচ্ছিল আন নাহদা। এ পরিস্থিতিতে তেমন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার না থাকায় প্রেসিডেন্ট সাইদ যে এমন একটি ইউটার্ন পরিস্থিতি তৈরি করবেন তা বোধ করি ক্ষমতাসীন জোট টের পায়নি। সাইদের প্রথমে স্থগিত করা ও এ বছরের ৩০ মার্চ ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্টের স্পিকার ঘানুচিও না। কিন্ত ক্ষমতা হারিয়ে বড় কোনো আন্দোলনও করতে পারেনি আন নাহদা পার্টি। এই হলো এক বছর আগের প্রেক্ষাপট। এটাও ঠিক তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তপরবর্তীকালে বেশ কিছু প্রতিশ্রম্নতি পূরণ হয়নি এবং এখানে যে সমস্যা চলছিল তার একটা কারণ এটাই। বিশ্লেষকরা বলেন, তিউনিসিয়াকে দেখা হয় আরব বসন্তের একমাত্র সাফল্য হিসেবে, কিন্তু এখানে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সাইদ পার্লামেন্ট স্থগিত করা এবং প্রধানমন্ত্রী হিশেষ মেচিচিকে বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- তা হয়তো তিউনিসিয়ায় এতকাল যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা বানচাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এক বছর পর তা প্রমাণিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মেচিচিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল বেশ কিছু শহরে গণবিক্ষোভের পর। এই বিক্ষোভের আগে দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল। মনে করা হয়, এসব বিক্ষোভে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদেরও হাত ছিল। যেটা উলেস্নখযোগ্য ব্যাপার তা হলো, এই বিক্ষোভকারীরা স্স্নোগান দিচ্ছিল পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে। অনেকের কাছে মনে হয়েছিল- এক বছর ধরে বিশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনার পর এটাই হচ্ছে নতুন আশার আলো। কিন্তু অন্যদের কাছে মনে হয়েছিল যে, সাংবিধানিক দিক থেকে এটা হবে অত্যন্ত প্রশ্নসাপেক্ষ এক পদক্ষেপ- যার পরিণতিতে অস্থিতিশীলতা এবং সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কার্যত এখন তা-ই হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানীয় বিশ্লেষক এ রকমটাই বলছেন। তা ছাড়া তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক সংকটের মূল অনেক গভীরে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত নামের গণবিক্ষোভে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট জায়নুল আবিদিন বেন আলি উৎখাত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিউনিসিয়ায় অনেক সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং বিদায় নিয়েছে। কোনো কোনো সরকারের আয়ু ছিল মাত্র কয়েক মাস। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাইদ একসময় ছিলেন সাংবিধানিক আইনের একজন অধ্যাপক। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। বিবিসি মনিটরিংয়ের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা সংক্রান্ত দুই বিশেষজ্ঞ সামিয়া হোসনি এবং আমিরা ফাতালিয়া বলছেন, তিউনিসিয়ার জনগণের মধ্যে প্রেসিডেন্টের পক্ষে এখনো বেশ ভালো সমর্থন রয়েছে। সাইদ জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি ৭২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন- যাতে দেশের রাজনৈতিক এস্টাবিস্নশমেন্টের ব্যাপারে জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলন ঘটেছিল। তিউনিসিয়ার সমাজের তরুণ অংশ- যারা দলাদলির রাজনীতির ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ- তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট সাইদের পক্ষে বড় সমর্থন আছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মি. মেচিচিকে নিয়োগ করেছিলেন ২০২০ সালের জুলাই মাসে- তার পূর্বসূরি এলিয়েস ফাখফাখের পদত্যাগের পর, যিনি ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র পাঁচ মাস। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সংঘাত কি সমস্যার মূলে ছিল? ফাখফাখের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী মেচিচির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সাইদের প্রায়সই খটাখটি বেধে যাচ্ছিল। তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট উভয়েই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে গঠিত হয় একটি কোয়ালিশন সরকার - বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে। এসব পার্টি অনেক সময়ই বিভিন্ন নীতিগত প্রশ্নে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে ছিল। প্রেসিডেন্ট সাইদ কয়েকজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন। এর মধ্যে ছিলেন সেই সব মন্ত্রী- যারা স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিচারের মত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট সাইদ তারই নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন- যে দায়িত্ব আগে ছিল প্রধানমন্ত্রী মেচিচির হাতে। এর পর তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে, কেউ যদি জনগণের মধ্যে 'টাকা ছড়িয়ে' তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করার চেষ্টা করে এবং কেউ সহিংসতার সৃষ্টির কথা ভেবে থাকে- তাহলে সশস্ত্র বাহিনী 'বুলেট দিয়ে তার জবাব দেবে।' এ সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। তবে তা কানে নেননি সাইদ। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর তা দেশটির জাতীয় অর্থনীতির ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে নেমে আসে। বেকারত্বের হার বেড়ে যায়। অর্থনীতির একটা অন্যতম প্রধান খাত ছিল পর্যটন। কোভিড-১৯ এর কারণে তাতে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতেও গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালে তিউনিসিয়ার অর্থনীতি ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। বিপস্নবের পর লোকজন কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে তখনো কিছুই করা হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারির ব্যাপারে সরকার যা করেছে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা ক্রমাগত বাড়ছিল। কোভিড মৃতু্যহার সবচেয়ে বেশি ছিল তিউনিসিয়ায়। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছিল পিছিয়ে। আর এ সবেরই ফল কায়েসের উল্টো যাত্রা। পার্লামেন্ট স্থগিত করার এ বছরের মাথায় কায়েস সাইদ নতুন সংবিধান প্রশ্নে তথাকথিত গণভোটের আয়োজন করেন সম্প্রতি। নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। কায়েসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বা এই গণভোট প্রতিরোধ কার্যকর কিছু করতে পারেনি আন নাহদা বা কোনো দল। তবে গণভোটে ভোটার উপস্থিতি কম করাতে দলগুলো সক্ষম হয়েছে। মোট ভোটারের মাত্র ২৫ শতাংশ উপস্থিত হওয়ার ফলে এটাকে রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ করে ছেড়েছে বিরোধী দলগুলো। তারা গণভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল। প্রস্তাবিত খসড়া সংবিধান অনুমোদনে ২৫ জুলাই ভোটাররা ভোট দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। প্রেসিডেন্ট সাইদের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার অভিযোগ দিয়ে আসছে, এই ভোট তা আরো পোক্ত করেছে। তবে সাইদ বলেছেন, 'দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক অভিজাতদের লাগাম টেনে ধরার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন জরুরি। গণভোটের মাধ্যামে জনগণ দেশটির সংবিধানে সংসদীয় ব্যবস্থা থাকবে, নাকি রাষ্ট্রপতি শাসিত হবে- তা নির্ধারণ করবে।' প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানে নির্বাহী, আইন প্রণয়ন ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংবিধানের বিরোধীরা বলেছেন, তারা ভোটকে বৈধতা না দিয়ে বয়কট করবেন। তারা তা করেছেন। জনগণ তিউনিসে বিক্ষোভ করেছে এবং পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নও চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সাইদ বলেছেন, প্রস্তাবিত নতুন সংবিধান হলো তিউনিসিয়ার তৃতীয় প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিগত দলিল। নতুন সংবিধান ডিসেম্বরে আইনসভা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সাইদকে দেশ পরিচালনায় বৈধতা দেবে। ২০১৪ সালে গৃহীত পূর্ববর্তী সংবিধান নাগরিকদের এবং বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের জন্য অবিসংবাদিত অধিকার এবং স্বাধীনতা দিয়েছিল। \হপ্রেসিডেন্ট সাইদকে সমর্থন করার লোকও আছে তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি এতটা কম হবে তা হয়তো শাসকরাও ভাবেননি। কায়েসের এক সমর্থক বলছেন, প্রেসিডেন্টই একমাত্র ভরসা। আমি ভোট দিতে এসেছি তিউনিসিয়াকে পতনের হাত থেকে বাঁচাতে। বছরের পর বছর দুর্নীতি ও ব্যর্থতার হাত থেকে বাঁচাতে। কিন্তু এই ব্যক্তির এই আশাবাদ যে কতটা অন্তসারশূন্য ৭৫ ভাগ ভোটারের ভোট বর্জনই তা বলে দেয়। ভোট যতই কম পড়ুক প্রদত্ত ভোটের সিংহভাগ (৯২ দশমিক ৩ শতাংশ) পেয়ে কায়েস জিতেছেন। ৭৫ শাতংশ লোকের মতামতবিহীন এই ফলের কি মূল্য আছে ভোট বর্জনকারীদের এটাই জিজ্ঞাস্য। তারা কায়েস সাইদকে একজন বিশ্বাসঘাতক ও হবু একনায়ক হিসেবেই দেখতে চাইছেন। শুধু তাদের কথাই নয়, বিশ্লেষকরাও এটাকে একই চোখে দেখছেন। তিউনিসিয়া আবার একনায়ক বেন আলির যুগে ফেরত যেতে চলেছে এটাই তাদের ভাবনার বিষয়। তাদের মতে নতুন সংবিধান স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু তা থেকে বেরিয়ে আসতেই ২০১১ সালে আরব বসন্ত এসেছিল। আহমদ মতিউর রহমান: প্রাবন্ধিক ও কলঅম লেখক