বাল্যবিয়ে বেড়েছে রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাকালে নানা ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে প্রধান হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট। এই সংকটের মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বাল্যবিয়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৪১৪ শিক্ষার্থীর। এ সময় শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭০৬ জন। ১৫ আগস্ট সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের জন্য দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২০ হাজার ২৯৪টি। সেই হিসাবে তথ্য পাঠায়নি ৮ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার রোগী শনাক্ত হলে ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটানা প্রায় ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সশরীর ক্লাস শুরু করা হয়। এ সময়ে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে উদ্বেগজনক হারে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও বলছে, বাল্যবিয়ের তথ্য নিয়মিতই তাদের কাছে আসছে। আর তা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর বিপরীতে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা কমে আসার তথ্য দিয়ে নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন, এ পরিস্থিতি চললে তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ শতাংশ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদের এলাকায় বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছে। সংস্থাটির ১১টি জেলার ৫৫৭ জন সাক্ষাৎকারদাতার ৭২ জন এ সময়ে ৭৩টি বাল্যবিয়ের ঘটনা দেখেছেন। এসব বাল্যবিয়ের ৮৫ শতাংশই হয়েছে সংকটকালে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে। ৭১ শতাংশ বিয়ে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। করোনাভাইরাস সংকটে বিদেশ থেকে ফেরত আসা পাত্র পাওয়ায় ৬২ শতাংশ শিশুর পরিবার বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। ৬১ শতাংশে বিয়ে হয়েছে অভিভাবকের সীমিত উপার্জনের কারণে পরিবার চালানোয় হিমশিম খাওয়ায়। এটা হতাশাজনক চিত্র। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে মার্চ থেকে মানুষ, বিশেষ করে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মুখোমুখি। সেই সঙ্গে বাড়ছে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি। কমছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে নারীর প্রজনন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে- যা আমাদের জন্য এক অশুভ বার্তা। মনে রাখতে হবে, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার নির্যাতনে মারা যায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।