পাঠক মত

অতীত ভুলে যেও না

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

মো. মাকসুদ উল্যাহ চিকিৎসক, ঢামেক হাসপাতাল
নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে কেউ উচ্চ শিক্ষিত হলে কিছু লোক বিভিন্ন সময় তাকে অপমানিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে । এর একটা পদ্ধতি হচ্ছে তাঁকে এই কথা বলা, ‘অতীত ভুলে যেও না’। এটা একটা খারাপ আচরণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মানসিক আঘাত করার শামিল। কারও উদ্দেশে এ ধরনের কথা শুধু তখনই বলা যায়, যদি সে অতীতে চুরি-ডাকাতি, হত্যা ব্যভিচার বা ধষর্ণ করে থাকে! অথবা তার জন্য যদি আপনার কোনো বড় অবদান থাকে। এমনকি ইসলামের দৃষ্টিতে এসব ক্ষেত্রেও এ ধরনের আচরণ অনুচিত। সে কি অতীতে কারো পাকা ধানে মই দিয়েছে নাকি, যে কারণে তাকে অতীত মনে করিয়ে দেয়া দরকার হচ্ছে? নাকি কেউ নিজে না খেয়ে তাকে খাইয়ে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে? নিম্নবিত্ত পরিবারের কেউ চেষ্টা সাধনা করে প্রতিষ্ঠিত হলে তাকে এ ধরনের কথা বলে কি বোঝানো হয়? কারো এ কথা বলার অধিকার আছে না কি? এতে বরং প্রমাণিত হয় বক্তা আবেগী এবং অন্যের ভালো দেখতে পারেন না। এটা বক্তার সংকীণর্মনতার পরিচয়। সে কি কারো কাছে উপদেশ ভিক্ষা চেয়েছে? কখন, কার কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে হবে, তা সে নিজেই ভালো জানে। কেউ গায়ে পড়ে তাকে উপদেশ দিতে আসা অনুচিত। কেউ কি এ কথা বলতে চায় যে, ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে এমনটা করা হচ্ছে? ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে কোনো উপদেশ দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উচিত তাকে উপদেশ দেয়ার মতো যোগ্যতা নিজে অজর্ন করা। বক্তার সে যোগ্যতা হতে হবে আলোচ্য ব্যক্তির চেয়ে বেশি। বক্তাকে নৈতিকভাবে হতে হবে স্বচ্ছ। কোনো জ্ঞানী, ভদ্র লোক ইতিবাচকভাবে কখনো এভাবে কথা বলে না। বরং তারা এভাবে কথা বলে, ‘অনেক বিত্তশালী লোকেরা তঁাদের সন্তানকে মানুষ করতে পারে না, অথচ আপনি গরিব পিতার সন্তান হয়ে নিজ যোগ্যতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ বিদ্যান হয়েছেন। সবার মনে এরকম আশা থাকলেও সবাই এমনটা হতে পারে না। আপনাকে অভিনন্দন। এবং আমরা মনে করি আপনি নিজ যোগ্যতায় পরিবার, সমাজ/জাতিকে কিছু দিতে পারবেন’। এটা হচ্ছে ভদ্রজনোচিত কথা। কেউ যদি নিজ চেষ্টা পরিশ্রম দ্বারা নিজেকে ইতিবাচকভাবে গড়ে তুলতে না পারেন, তাহলে তিনি চুপ থাকুন। কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কি সে কারো প্রতি কোনো অপরাধ করেছে? নাকি অতীতে সে বা তার বাবা গরীব ছিল, এটা তার পাপ; এবং এজন্য সে আপনাকে সিজদা করতে বাধ্য? কেন এই আপত্তিকর আচরণ? কেউ যদি অবৈধ উপায়ে বিত্তশালী হয়, তাহলে তঁাকে এভাবে বলা যেতে পারে। অন্যথা এ ধরনের আচরণ অবশ্যই আদবের লঙ্ঘন!