কৃষি অর্থনীতি জাতিকে রক্ষা করতে পারে
জাতির অর্থনৈতিক মন্দা উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে খাদ্য ও কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জন। কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল হলেই দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। যেমন করে কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল হয়েই একদিন ভিয়েতনাম ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল জাতিকে কখনোই মাথা পদানত করতে হয় না। সুতরাং, এ কথা বলতে পারি যে, কৃষি অর্থনীতি জাতিকে সমূহবিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
কৃষি এ দেশের অর্থনীতির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। অধিকন্তু কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস। এখনো দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করেই। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, জীবনযাত্রায় মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে কৃষিক্ষেত্রে যে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা বর্তমান সরকারের কৃষি ভাবনার এক বাস্তব প্রতিফলন। প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ, বীজ, সার, বালাইনাশক, সেচ ব্যবস্থাপনাসহ কৃষি যন্ত্রপাতির প্রাপ্তিতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে দিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষকদের উৎপাদিত মৌসুমি ফসল- ধান, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, তেলবীজ, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, গুড় ও পাটসহ অন্যান্য ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে উদ্বৃত্ত ফসল যথোপযুক্তভাবে সরকারি খরচে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে কৃষক ভাইয়েরা যেমন এসব ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হবে, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে কোনো খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এসব ফসল অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ দেবে। কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষিপণ্যের পরিবহণ, গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ নির্বিঘ্ন হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষি এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড। বাংলাদেশের সংবিধানে কৃষিবিপস্নবের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নকে রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আছে কৃষি। কৃষিকে বাদ দিয়ে এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা একান্ত অপরিহার্য। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাত অর্থাৎ ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং বন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থান জোগান এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ করে। কৃষি সামাজিক কর্মকান্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র- যা জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এছাড়া, কৃষি বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তাদের বাজারের চাহিদাভিত্তিক মালামালের উৎস।
বলা যায়, কৃষি খাতটি অভ্যন্তরীণ সম্ভাবনাময় বাজারের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও বাংলাদেশের প্রবেশের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বিশ্ববাজারে প্রবেশের বড় সম্ভাবনাও বিদ্যমান। কৃষি এখনো দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা এবং অধিকাংশ জনগণই জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই কৃষিভিক্তিক শিল্পে স্বল্পমাত্রার সঞ্চালনা ও প্রেষণাই আমাদের গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে যেমন পারে তেমনি গ্রামীণ জনগণের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকাও রাখতে পারে। জাতিসংঘের এসডিজি অর্জন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি শিল্পের উন্নয়ন এবং এ খাতকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করার জন্য কৃষি খাতের উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার অর্জন করেছে। বৃহৎ অর্থে কৃষিতে শস্য, প্রাণিসম্পদ (গবাদিপশু, মৎস্য ও পোল্ট্রি) এবং বন খাত অন্তর্ভুক্ত। একটি কৃষিভিক্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং ফলমূল উৎপাদিত হয়। অধিকন্তু পোল্ট্রি, ডেইরি, মৎস্য ইত্যাদি উপ-খাত হিসেবে সাম্প্রতিককালে উদীয়মান এসব কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানিরও অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানের উপকরণ। দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিবিএস প্রতিবেদন-২০২০ অনুযায়ী দেশের শ্রমশক্তির ৪০.৬ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩.৩১ শতাংশ। কৃষির উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। কৃষি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। বর্তমানে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে, সে জন্য কৃষির উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কৃষির উন্নয়নে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার, গুণগত মানসম্পন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, সারের মূল্য হ্রাস, সুষম সার প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বেসরকারি কোম্পানিদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বেসরকারি খাতে দেশে মানসম্পন্ন সবজি বীজ উৎপাদন করে বীজের জোগান বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জনগণকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত কৃষি উন্নয়নের নতুন নতুন পদ্ধতি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন করা সম্ভব। পতিত জমি কাজে লাগানো, এক জমিতে বছরে চার ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারলে কৃষিবিপস্নব হবে। এ দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত। গ্রামের উন্নয়নের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে কৃষি উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন। যার ফলে এ দেশের অর্থনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরের নাম হচ্ছে কৃষি।
বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কৃষকরা। তাদের সহায়তা করছেন কৃষিবিদরা। আর এই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকগণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টি নীতি নির্ধারকগণের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে উপরে বর্ণিত বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এসব পদক্ষেপে শতকরা প্রায় ৮৪ ভাগ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক কীভাবে লাভবান হবে সেটিই দেখবার বিষয়। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় সরকারের নানান পদক্ষেপ দরিদ্র কৃষকের পক্ষে খুব একটা কাজে আসেনি। সেই বিবেচনায় বাজেট প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উলেস্নখ্য যে, ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীর প্রতি যে কথা বলেছিলেন তা স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের নজর গ্রামের দিকে দিতে হবে। কৃষকদের রক্ষা করতে হবে, কৃষককে বাঁচাতে হবে। উৎপাদন করতে হবে। তা না হলে বাংলাকে বাঁচাতে পারবেন না।
কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে ছোট খামারের ভূমিকাই বেশি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য বর্তমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর গতিশীল করা এবং টেকসই বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন অপরিহার্য। প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে টেকসই কৃষি নিবিড়করণ ও বহুমুখীকরণের জন্য প্রয়োজন কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণের সম্মিলিত দক্ষ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে যথাযথ মূল্য সংযোজন এবং সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার সহায়তা প্রয়োজন। জ্ঞান-নিবিড় কৃষিকে টিকিয়ে রাখার জন্য উৎপাদনশীলতা, সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা, যুগোপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার, গবেষণা ও পরীক্ষা কাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহ বজায় রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কৃষির জন্য প্রয়োজন অধিকতর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা। বর্তমান সময়ের বহুমাত্রিক জাতীয় এবং অর্থনৈতিক পরিবেশে কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনায় সরকারি ব্যয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্দেশনা- চাষযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল উৎপাদন করতে হবে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কৃষিবিভাগকে অত্যন্ত আন্তরিক হতে হবে। বিশেষত বস্নক সুপারভাইজার ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এ ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। কৃষক ও কৃষিবিভাগ এবং সব গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। যেসব জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে সেসব জমি ফসলের প্রকারভেদে অবশ্যই চাষের আওতায় আনতে হবে। আমাদের অর্থনীতির আরেকটি অদৃশ্য খাত রয়েছে যেটাকে আমরা 'নারী অর্থনীতি' বলে থাকি। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীদের অবদান অর্থনীতিতে কম নয়। বিশেষত আমাদের যেসব মা-বোনেরা গ্রামে বসবাস করে তারা কোনো না কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকে। যেমন- হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল পালন, ভেড়া পালন, বাড়ির আঙিনায় ফলমূল চাষ, লাউ, বরবটি, করোলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা চাষ, মানকচু, মাটে আলু, লাল শাক, পালং শাক, শজনে প্রভৃতি উৎপাদন। সেই সঙ্গে ধান, গম মাড়াই, ফসল শুকানো, গোলায় ভরা, পরিবারের প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রক্রিয়া করাসহ নানাবিধ কাজ করে থাকে।
করোনকালীন মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশকে খাদ্য নিয়ে ভাবতে হয়নি কারণ চাহিদার প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য উৎপাদনে আমাদের স্বনির্ভরতা ও সক্ষতা অর্জন। করোনা ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই নতুন করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দা অবস্থা শুরু হয়েছে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে আমাদের দেশেও তার নেতিবাচক প্রভাবে ডলার ও রিজার্ভ সংকটসহ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মরিচ ও অন্য সব নিত্যপণ্যের হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি খাত। আধুনিক লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি খাতে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, সরবারহ, জোগান ও মজুত ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তদারকিকরণ এবং কৃষকদের সহজশর্তে স্বল্পসুদে ব্যাংক লোন প্রদান ইত্যাদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেহেতু কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে আর বিশ্বমন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিজমির যথাযথ ব্যবহার ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এখন আমাদের খাদ্যের জোগান ঠিক রাখার প্রধান উপায়। তাই কৃষিতে ব্যাপক গবেষণা এবং নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার ও ব্যবহারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকার কৃষি সম্প্রসারণকে সেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে, যা বর্ধিত কৃষি উৎপাদনের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষককে উপযুক্ত কারিগরি ও খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ প্রদানসহ নতুন প্রযুক্তি, উন্নত খামারপদ্ধতি এবং কলাকৌশল বিষয়ে সহায়তা প্রদান করবে। টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদে কৃষিসম্প্রসারণ সেবাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অব্যাহতভাবে অনুভূত হচ্ছে এবং সে প্রেক্ষাপটে গবেষণা ও সম্প্রসারণ পরস্পরের সঙ্গে এবং খামার পর্যায়ে উৎপাদন বিষয়ে প্রয়োজনে কৃষকের সঙ্গে পারস্পরিক মতবিনিময়সহ সমস্যা সমাধানে কার্যকর সহায়তা দান করতে পারে এমন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বর্তমানে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। যেমন- জাতিসংঘ থেকে মানবাধিকার নিয়ে চাপ- তবে এ চাপকে কতটা পাত্তা দেয় বাংলাদেশ? রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কি করতে পারে বাংলাদেশ? এছাড়া অনাবৃষ্টি- মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে নাজেহাল বাংলাদেশ। কোথায় যাবে আমাদের কৃষকরা? এসমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব? তবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁডাতে পারবে।
জাতির অর্থনৈতিক মন্দা উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে খাদ্য ও কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জন। কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল হলেই দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। যেমন করে কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল হয়েই একদিন ভিয়েতনাম ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কৃষি অর্থনীতিতে সাবলীল জাতিকে কখনোই মাথা পদানত করতে হয় না। সুতরাং, এ কথা বলতে পারি যে, কৃষি অর্থনীতি জাতিকে সমূহবিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক