থাই কিশোর ফুটবল দল উদ্ধার

অভিযানটি ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
থাইল্যান্ডে নিখেঁাজ ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং নামে একটি গুহায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আটকে ছিল এই ফুটবল দলটি। যাদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর এদের সহকারী কোচের বয়স ২৫ বছর। নয় দিন সেখানে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচাডর্ স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। এরপর থেকে তাদের উদ্ধারে উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। অবশেষে দুগর্ম গুহা থেকে তাদের উদ্ধার অভিযান রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। গোটা বিশ্বের চোখও আটকে ছিল এই উদ্ধার অভিযানে। তিন দিনের টানা প্রচেষ্টায় উদ্ধার অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেন থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশের উদ্ধারকারীরা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ফুটবলার দলটি গুহার ভেতর যাওয়ার পর গুহা পানিতে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানি না কমা পযর্ন্ত তাদের উদ্ধার করা কঠিন, থাই কতৃর্পক্ষ এমন ঘোষণা দিলে আটকে পড়া শিশুদের পরিবারের সঙ্গে গোটা বিশ্বে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে বিশ্বের নামকরা ডুবুরি প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপরই দ্রæত উদ্ধার অভিযান শুরুর তাগাদা আসে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার কাজে ৯০ জন ডুবুরি থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি। ফুটবলারদের আটকে পড়া ওই এলাকা এতটাই সংকীণর্ যে, এই জায়গাটি অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে উদ্ধার অভিযানটি কতটা উদ্বেগের ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। দলটি গুহামুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়ে ছিল। যেপথ ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। থাম লুয়াং গুহার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সঁাতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধার অভিযানে একজন ডুবুরিকে প্রায় ১১ ঘণ্টার অত্যন্ত ক্লান্তিকর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। প্রথমে স্রোতের বিপরীতে ছয় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের কাছে পেঁৗছতে হয়েছে। এরপর কিশোরদের নিয়ে স্রোতের অনুক‚লে পঁাচ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে গুহামুখে আসতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গুহার এক কিলোমিটারের পথ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূণর্। সেখানে অন্তত দুটি স্থানে ঘোলা পানিতে পরিপূণর্ পথ এতটাই সংকীণর্ যে, ডুবুরিদের পিঠ থেকে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক খুলে ওই এলাকা পার হতে হয়েছে। চার কিলোমিটারের পথের মাঝামাঝি ‘টি-জংশন’ নামের সেকশনটি পার হওয়া সবচেয়ে কঠিন। এই কঠিন সেকশনটিও বিশেষজ্ঞ ডুবুরিরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অতিক্রম করে নিখেঁাজদের উদ্ধার করেছেন, যা একটি স্মরণীয় সাফল্য নিঃসন্দেহে। উদ্ধার অভিযান শেষে ডেনমাকের্র বিশেষজ্ঞ ডুবুরি ইভান কারাজিচ বলেছেন, এতোগুলো কিশোর কোনো ধরনের আতঙ্ক ছাড়াই বের হতে পেরেছে, এরা অত্যন্ত সাহসী যা সত্যিই বিশাল ব্যাপার। জানা গেছে, উদ্ধারকারী বিশেষজ্ঞরা সবের্শষ ধাপ অথার্ৎ ‘টি-জংশন’ অতিক্রমের আগে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বসিয়েছিলেন। এই বেস ক্যাম্প উদ্ধার অভিযানে সহায়ক হয়েছে। যেকোনো উদ্ধার অভিযানই অত্যন্ত কঠিন। তবে থাইল্যান্ডের দীঘর্তম এই থাম লুয়াং গুহায় উদ্ধার অভিযান যে কতটা কঠিন তা বিশেষজ্ঞ ডুবুরিদের ভাষ্যে উঠে এসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিশোরদের কাছে অক্সিজেন পেঁৗছে দিয়ে ফেরার পথে একজন ডুবুরির মৃত্যু ঘটে। উল্লেখ্য যে, ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে কিশোর ফুটবলাররা। ১০ কিলোমিটার দীঘর্ গুহাটি থাইল্যান্ডের অন্যতম দীঘর্ গুহা। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভারী বষর্ণ আর কাদায় থাম লুয়াংয়ের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা আটকা পড়ে। নিখেঁাজের পর গুহার পাশে তাদের সাইকেল এবং খেলার সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিখেঁাজের নয় দিন পর দুইজন বৃটিশ ডুবুরি চিয়াং রাই এলাকার গুহায় তাদের জীবিত সন্ধান পান। পরে থাইল্যান্ডে নৌ বাহিনী গুহায় আটকা পড়া কিশোরদের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। অবশেষে এদের উদ্ধার করে একটি সফল উদ্ধার অভিযানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ডুবুরিরা। এ অভিযানটি ইতিহাসে অনন্য উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বলেই আমরা মনে করি।