ভতিের্ত বাড়তি অথর্ আদায়

নৈরাজ্য কি চলতেই থাকবে?

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এবারও রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ভতির্চ্ছু শিক্ষাথীের্দর কাছ থেকে বাড়তি অথর্ আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা থাকলেও উপায়ন্তর না দেখে তারা অতিরিক্ত অথর্ দিয়ে সন্তানদের ভতির্ করাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে অতিরিক্ত অথর্ আদায় করছেন এবং এতে তারা অন্যায় কিছু দেখছেন না, এমন তথ্যও এসেছে গণমাধ্যমে। অথচ রাজধানীর মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভতির্র ক্ষেত্রে পঁাচ হাজার এবং আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহিভ‚র্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানে ভতির্র সময় বাংলা মাধ্যমে আট হাজার এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে এমন ঘোষণা দিয়ে সবের্শষ ভতির্ নীতিমালা ২০১৮ জারি আছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত অথর্ আদায়ের যে ফঁাদ তৈরি করেছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর অবসান হওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমÐির জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, স্ট্যামফোডর্ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাড্ডা আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, কোনো কোনো স্কুলে শুধু প্রথম শ্রেণির ভতিের্ত উন্নয়ন ফি বাবদ ২৫ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা শিক্ষাথীর্ ভতিের্ত এরূপ ফি নিধার্রণকে ‘গলাকাটা’ আখ্যা দিয়ে এর অবসান প্রত্যাশা করেছেন। অন্যদিকে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তেই ভতির্ ফি নিধার্রণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। প্রতিবারই বছরের শুরুতে শিক্ষাথীর্ ভতির্র সময় অতিরিক্ত অথর্ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এদের বিরুদ্ধে কাযর্কর উদ্যোগ নিতে ব্যথর্ হওয়ায় প্রতিবছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। আর এর খেসারত দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে অভিবাবকদের, যা কাম্য হতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়তি অথর্ আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ প্রশ্নটি হলো, মূলত সরকারের অথের্ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিদের্শ না মানে তা হলে জনগণ ভরসা রাখবে কোথায়? জাতির ভবিষ্যৎ নিমাের্ণর গুরুদায়িত্ব যাদের ওপর অপির্ত তাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত শুধু নয়, নিন্দনীয়ও বটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীসহ সারা দেশের স্কুলে ভতির্ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রতিবছর গণমাধ্যমে এলেও অতিরিক্ত অথর্ আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাড়তি ফি আদায়ে শীষের্ আছে রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থা চলতে থাকলে সীমিত আয়ের অনেক অভিভাবক আথির্কভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সন্তানের শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, এটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক রকম ভতির্ ফি আদায়ের যে অভিযোগ এবারও উঠেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব বিষয়ে কতৃর্পক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নানা অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় চলতেই থাকবে। ভতির্র বিষয়ে সরকারি নীতিমালার পাশাপাশি ভতির্ ফি আদায়ের বিষয়টি পযের্বক্ষণে ১১টি টিম কাজ করছে বলেও জানা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত ফি নিয়ে কেউ পার পাবে না। সবাইকেই বাড়তি টাকা ফেরত দিতে হবে। অতিরিক্ত ভতির্ ফি নেয়ার পর তা ফেরত দেয়ার অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের মোটেও সুখকর নয়। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী এমন ঘোষণা দিলেও অতিরিক্ত অথর্ কোনো অভিভাবক ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই। আমাদের কথা হলো, মনিটরদের নজর এড়িয়ে কীভাবে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে সংশ্লিষ্টরা? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা নিজেদের ইচ্ছামতো মাত্রাতিরিক্ত ভতির্ ফি নিধার্রণ করতে পারে কিনা- এ প্রশ্নেরও সমাধান হওয়া যৌক্তিক। আমরা মনে করি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অজর্ন যে বাধাগ্রস্ত হবে, তা সংশয়হীনভাবেই বলা যায়। সবোর্পরি বলতে চাই, সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভতির্বাণিজ্যে নেমেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রæত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো অনিয়মের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অথর্ আদায়কারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়।