পাঠক মত

নারী নিযার্তন: সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হোক

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

মো. রুহুল আমীন শিক্ষাথীর্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নারী নিযার্তন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নিযার্তনের শিকার নারী। যৌতুক নামের যমরাজ কৌতুক আজো ঘরে ঘরে বিদ্যমান। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই এসব ঘটনা দৈব নয়। সিলেটে আট মাসের অন্তঃসত্ত¡া বধূ খুন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় সৈনিকের স্ত্রী খুন, ফরিদপুরে যৌতুকের কারণে গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারা, হাজারীবাগে শিশুসহ গৃহবধূকে খুন, গৃহকমীের্ক নিযার্তন করে হত্যাÑ এসব ঘটনা তারই সত্যতা বহন করে চলছে। যৌতুক কি কখনো দূর হবে না সমাজ থেকে? এভাবে আর কত নারীকে জীবন দিতে হবে? যৌতুকের বলিতে নারী আজ অসহায়। নববধূ সোনালি স্বপ্ন নিয়ে যায় স্বামীর ঘরে। কিন্তু যৌতুকের কারণে যখন সে নিযাির্তত হয় তখন তার স্বপ্নই শুধু ভেঙে পড়ে না, সঙ্কীণর্ হয়ে আসে এ পৃথিবীটাও। সে সামনে শুধু দেখে খাওয়ার জন্য বিষ অথবা গলায় দেয়ার জন্য ফঁাস। গরিব নারীরা এলাকা ছেড়ে শহরে আসে জীবিকার সন্ধানে। তাদের অনেকেই কাজ করে গৃহকমীর্ হিসেবে। কিন্তু তাদের ক্ষত-বিক্ষত করে, ছ্যঁাকা দিয়ে, পুড়িয়ে নিযার্তন করে মারা হয়। গ্রামে ফেরে তারা লাশ হয়ে। এসবের কারণ হিসেবে অসচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবকে চিহ্নিত করা যায়। যৌতুক নামের এসব সামাজিক ব্যাধি দূর করতে হলে সবর্স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা দরকার। সচেতন হলে অনেকাংশে এগুলো কমবে। এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও দরকার। আমরা জানি, নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক অনেক আইন আছে। যেমনÑ মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ-১৯৮৫, নারী ও শিশু নিযার্তন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ ইত্যাদি। এসব আইন শুধু খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ, এর কোনো বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না। ফলে নিযার্তনও বন্ধ হয় না। নগরায়ন বৃদ্ধির ফলে সামাজিক বন্ধন কমে যাচ্ছে। ফলে পরিবারগুলোর দায়বদ্ধতাও কমতে বসেছে। আর এ কারণেই পারিবারিকভাবে নিযার্তনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সুতরাং সচেতনতা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া দরকার। আসুন আমরা সচেতন হই। মানুষ হিসেবে নারীদের নৈতিক অধিকারটুকু ফিরিয়ে দেই। একে অন্যের মুখোমুখি না দঁাড়িয়ে বরং সহযোগী হই। এ ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আইনের শাসন। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বতর্মান সরকার দিনবদলের শপথ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। নারী নিযার্তন দমনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। নারী ফিরে পাক তার নৈতিক অধিকার। সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হোক। নারীর ওপর নিযার্তন বন্ধ হোক চিরতরে।