২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার ৯৩৬ নারী
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি
প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে সমাজে ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েই চলেছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণপরবর্তী হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এর থেকে আমাদের কোমলমতি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০২২ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৯৩৬ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণপরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। তবে ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট নারী এক হাজার ৩২১ জন। এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪৭৯ নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ২৯২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ৯৭ জন। তবে এর আগের বছর ২০২১ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৬৪০ জন নারী। অন্যদিকে, ২০২২ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৭৪ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭৯ নারী এবং আত্মহত্যা করেন ৭ নারী। ২০২২ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃতু্য, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫১৬ জন শিশু। এই ধরনের সংবাদ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
পারিবারিক বন্ধন স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতা আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। যা বর্তমান সমাজে প্রকট।
সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে ধর্ষণ-গণধর্ষণ কিংবা নারীর অবমাননা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়।
আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক; যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় এত চরমে পৌঁছেছে। নানা ছলে, প্রতারণায় এমনকি প্রকাশ্যে পরিবারের ভেতর ঢুকে পড়ছে দুর্বৃত্তরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা করছে। চলন্ত গাড়িতে, বাসে, ট্রাকে চলছে ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ংকরভাবে উদ্বেগজনক। মানুষ অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ফলে মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে। অন্যায়টাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন এবং এর কোনো বিকল্প নেই।