নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে

জনসংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছে। পৃথিবীর বতর্মান জনসংখ্যা সাড়ে ৭০০ কোটির বেশি। এর সঙ্গে প্রতি মিনিটে গড়ে যোগ হচ্ছে দেড়শ’ মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২০-২৫ লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এই জনসংখ্যা দেশের একটি জেলার জনসংখ্যার সমান। দেশের নীতিনিধার্রণী পযার্য় থেকে বলা হয়ে থাকে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বতর্মানে সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। এরপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক এই তথ্য উদ্বেগের এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বগির্কলোমিটারের এই দেশটির নানাবিধ সমস্যার একটি জনসংখ্যা সমস্যা। দেশের এই বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হলে জনসংখ্যা আশীবার্দ হয়ে দেখা দেবে- বিশেষজ্ঞরা এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন বার বার। এরপরও কম আয়তনের এই দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। বিপুল এই জনসংখ্যা উন্নয়ন কাযর্ক্রমে বাধা হয়ে দঁাড়াচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ফলে পরিকল্পিত পরিবার গঠন করা না হলে বাড়তি জনসংখ্যা দিনে দিনে বিপদ হয়ে উঠতে পারে, এমন বিবেচনাও অযৌক্তিক নয়। তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার আগে ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূবর্ পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল চার কোটি ৪০ লাখ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এসে দঁাড়ায় সাত কোটি ১০ লাখে। ১৯৮১ সালে পরিচালিত আদমশুমারি অনুসারে দেশের জনসংখ্যা আট কোটি ৭০ লাখ ছিল। পরবতীর্ সময় ক্রমবধর্মান জনসংখ্যা বৃদ্ধির অব্যাহত ধারায় ১৯৮৮ সালে জনসংখ্যা পেঁৗছে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫১ জনে। এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একসময় হয়ে দঁাড়ায় এ দেশের এক প্রধান সমস্যা, যা ৮০’র দশকের দিকে বাংলাদেশ প্রথম অনুধাবন করে। ১৯৭৬ সালে সরকার জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমর্সূচি হাতে নেয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্যমতে, এ কমর্সূচি বাস্তবায়নের ফলে ২০০০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ থেকে ১.৪৭ শতাংশে নেমে আসে। অবশ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রথম দিকে সব মানুষ স্বতঃস্ফ‚তর্ভাবে গ্রহণ করেনি। নানারকম ভুল ধারণা, প্রতিবন্ধকতা দ্বারা বিঘিœত হয়েছে বারবার। ‘জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি’ এমন কথা প্রায়ই শোনা যেত অনেকের মুখে। এ নিয়ে ভয় ও বিভ্রান্তিও ছিল কারও কারও মধ্যে। তবে বতর্মান সময়ে এসে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসা সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা যায়, দেশের জন্মগ্রহণের হার বতর্মানে ২.১ শতাংশ; আর এতেই বছরে ২০-২৫ লাখ জনসংখ্যা বাড়ছে। আমরা মনে করি, এই হার আরও কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়। জানা গেছে, বতর্মানে দেশের ৬২ শতাংশ দম্পতি আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যা তাদের প্রজনন অধিকারকে সুসংহত করছে। কিন্তু এখনো ৫৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর পূণর্ হওয়ার আগেই। আবার তাদের ৩১ শতাংশ প্রথম বা দ্বিতীয়বারের মতো গভর্বতী হন ৪৭ শতাংশ মাত্র পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করে। এসব দিক বিবেচনায় রেখে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী বয়সে গভর্ধারণ হ্রাসের উদ্যোগ অপরিহাযর্ বলেই আমরা মনে করি। আমরা জানি, মা ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমডিজি অ্যাওয়াডর্ অজর্ন করেছেন। আবার উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও আমাদের ২০ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকার কারণে অপুষ্টি, অশিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। যার প্রভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মা ও শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধির ওপর পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, পরিকল্পিত উদ্যোগই পারে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে। সবোর্পরি বলতে চাই, অধিক জনসংখ্যা জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, বেকারত্ব, কৃষি জমি হ্রাস, মানব বিপযর্য় ইত্যাদির কারণও অধিক জনসংখ্যা। জনসংখ্যা অধিক হলে পরিবেশের বিপযর্য় ঘটে, দেশের উন্নয়ন কমর্কাÐ ব্যাহত হয় এবং পারিবারিক ও জাতীয় নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই পরিবার তথা দেশের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার কোনো বিকল্প নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল বিবেচনায় নিয়েই সংশ্লিষ্টরা কাযর্কর উদ্যোগ নিশ্চিত করুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।