ঝুঁকিতে কিশোরী স্বাস্থ্য

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি
বাল্যবিয়েসহ নানা কারণেই বিভিন্ন সময় কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। উল্লেখ্য, শহরের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো দেশকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেখতে হলে বাল্যবিয়ে কমাতে হবে। ইতোমধ্যে বিয়ে হওয়া কিশোরীরা যেন বিলম্বে গভর্ধারণ করে, সেই উদ্যোগও নিতে হবে। তথ্যমতে জানা যায়, দেশের জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। সংখ্যায় এরা তিন কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার। এর অধের্ক কিশোরী। অল্প বয়সে বিয়ে, গভর্ধারণ ও সন্তান জন্মদানের কারণে কিশোরীদের একটা অংশ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশে ১০-১৯ বছর বয়সী মানুষ অথার্ৎ কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা, তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, বিবাহিত কিশোরীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ধরন জানার জন্য ইউএনএফপিএ এই গবেষণাটি করেছে। শিগগিরই গবেষণা প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত হবে বলেও জানা যায়। আমরা বলতে চাই, বাল্যবিয়ে একটি সমস্যার নাম। আর বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যাবহুল দেশে তা আরও ভয়ানক। সঙ্গত কারণেই বাল্যবিয়ে রোধ করা না গেলে তা সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জনসাধারণের জীবনযাপনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা কাম্য নয়। এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, কিশোরীদের বিয়ের অন্যতম কারণ উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়া। আর অল্প বয়সে বিয়ের কারণে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে বিবাহিত কিশোরীরা। আমরা মনে করি, কিশোরী স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় যেমন বাল্যবিয়ে রোধে কঠোর হতে হবে, তেমনি বাল্যবিয়ে রোধের ক্ষেত্রে কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার বিষয়টিও আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা অস্বীকার করা যাবে নাম বাল্যবিয়ের জন্য অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব অন্যতম কারণ। ফলে সরকারের কতর্ব্য হওয়া দরকার, কিশোরীর স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হওয়া। ভুলে যাওয়া যাবে না, বাল্যবিয়ে শুধু বতর্মান সময়ের জন্যই ভয়ের নয় বরং ভবিষ্যতের জন্যও আশঙ্কার। নানা সময় এমনও আলোচনা সামনে এসেছে যে, নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অভিভাবকরা মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া এখনো অনেক অভিভাবক আছেন যারা মেয়েদের দ্রæত বিয়ে দেয়ার বিষয়টিকে সঠিক কাজ বলে মনে করেন। একই সঙ্গে দারিদ্র্য, সুশিক্ষার অভাবসহ নানারকম সংকটের কারণেই মূলত বাল্যবিবাহ রোধ হচ্ছে না। আমরা বিশ্বাস করি, এ পরিস্থিতিগুলো অনুধাবন করে সরকার যদি আরও বেশি সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে বাল্যবিয়ে অনেকাংশে কমে আসবে। যা কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোরীদের তথ্য দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যেন তাদের স্কুলজীবন দীঘর্ হয়, তারা ঝরে না পড়ে। উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে, যাতে বিয়েতে বিলম্ব হয়। আর বিয়ে করলেও যেন উপযুক্ত বয়সের আগে গভর্ধারণ না করে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগের ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, ২০১৬-২০৩০ সাল মেয়াদি জাতীয় কিশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। ১৪টি জেলার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ও ১৮৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে কিশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কনার্র করা হয়েছে। যেখানে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি নানা বিষয়ে পরামশর্ দেয়া হয়। আমরা মনে করি, ইউএনএফপিএর প্রতিবেদন এবং সাবির্ক পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা একটি দেশের কিশোরীদের একটা অংশ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে এমনটি কাম্য হতে পারে না।