বই উৎসব একটি শিক্ষা-বান্ধব উদ্যোগ

বিনামূল্যের বই বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য এক বড় ধরনের স্বস্তি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের বিশ্বাস, শুধু বিনামূল্যের বই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছু করার আছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়াসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্য সমস্যাগুলোর যদি প্রতিকার করা যায়, তাহলে এ দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিতটি শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারবে- যা একটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আর কে চৌধুরী
প্রতিবারের মতো বছরের প্রথম দিন রোববার পালিত হয়েছে বই উৎসব। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, করোনা, নানা ঝামেলা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী কষ্ট, তার মধ্যেও আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। তাদের বই ছাপানোর খরচটা অন্যদিক থেকে আমরা সাশ্রয় করেছি, বই ছাপানোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি দেওয়া হয়েছে গুরুত্ব। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে পাঠ্যবই উৎসব উদযাপন করে। এ বছর সারাদেশে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হবে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সর্বমোট ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। বছরের প্রথম দিন শিশুদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেওয়া সরকারের একটি অসামান্য কৃতিত্ব। উন্নত বিশ্বে যেটি সম্ভব হয়নি সে অভাবনীয় কৃতিত্বই দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিনামূল্যে সরকারের পক্ষ থেকে বছরের প্রথম দিন বই তুলে দেওয়ার কর্মসূচি শুরুর আগে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা ছিলেন বই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত বই বছরের শুরুতে পাওয়া ছিল দুষ্কর। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে নোটবই কিনতে বাধ্য করা হতো। গড়ে ৫-৬ গুণ বেশি দামে কিনতে হতো নোটবই। বিনামূল্যে বই বিতরণের পর সেই জিম্মি অবস্থার অবসান ঘটেছে। কাগজ ও মুদ্রণসামগ্রীর দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও সময়মতো বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় কৃতিত্ব। আগামীতে তা যাতে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হবে- এমনটিই প্রত্যাশিত। নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। সে বই যদি বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে এক ধরনের সার্বজনীনতাও রয়েছে। কেননা, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অনেকেরই নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তারা আগে পুরনো বই দিয়েই বছর পার করত। এখন সবার হাতেই নতুন বই। তাই উৎসবমুখর পরিবেশে সর্বস্তরের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শামিল হয়েছিল। বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়- শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি সরকারের অন্যতম ভালো কাজ নিঃসন্দেহে। কোনো কোনো বছর বই প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বটে, তবে উদ্যোগটি যে মহৎ এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিতরণকৃত কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে মুদ্রণ বিভ্রাট, পাতা এলোমেলো থাকা, ছাপার মান খারাপ হওয়া ইত্যাদি অভিযোগ এসে থাকে। এত বিশাল কর্মযজ্ঞে কিছু ভুলত্রম্নটি থাকতেই পারে, আসতে পারে বিভিন্ন স্তরে বাধা। কখনো কখনো সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতা ও দুর্নীতিরও পরিচয় দিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যর্থতা অথবা দুর্নীতির কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। এ কার্যক্রমের ভুলত্রম্নটিগুলো শুধরে কীভাবে একে সর্বাঙ্গীণ সফল করা যায় সেদিকেই এখন সরকারের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। বিনামূল্যের বই বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য এক বড় ধরনের স্বস্তি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের বিশ্বাস, শুধু বিনামূল্যের বই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছু করার আছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়াসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্য সমস্যাগুলোর যদি প্রতিকার করা যায়, তাহলে এ দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিতটি শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারবে- যা একটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। সে জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ