দুনীির্তর বিরুদ্ধে লড়াই

মূলোৎপাটনই প্রত্যাশিত

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের দেশে ঘুষ-দুনীির্তর বিষয়টি বহুল আলোচিত। সমাজের প্রতিটি স্তরে সবর্গ্রাসী রূপে, শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে জেঁকে বসেছে দুনীির্ত, এমন কথাও উচ্চারিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দুনীির্তর শেকড় সমাজ ও রাষ্ট্রের এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, তা সমূলে উৎপাটন সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টকর হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। আর এর জন্য সবাের্গ্র প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক সদিচ্ছার জাগরণ ঘটলে দেশ থেকে সব ধরনের অশুভ-অপশক্তি নিমূর্ল করা যে অসম্ভব নয়, তা আমরাও বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে, বহুবারই দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, ‘দুনীির্তকে আমরা প্রশ্রয় দেই না। নিজেদের লোককেই কোনো ছাড় দেই না। এমনকি আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে যে কোনো সময় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। আদালত থেকেও ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’ পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দুনীির্তর বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনবর্্যক্ত করেছেন। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং এর অজর্নসমূহ সমুন্নত রাখতে দুনীির্তবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ে প্রথম কমির্দবসে এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা দুনীির্তমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুনীির্ত যেহেতু দেশ ও জাতির জন্য মহাক্ষতিকর, সেহেতু দুনীির্ত প্রত্যাশিত হতে পারে না। সরকার দুনীির্তর বিরুদ্ধে কঠোর থাকার কারণেই গত বছর বিশ্বব্যাপী দুনীির্তর ধারণা সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতি হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) শেষ পযর্ন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, দেশে দুনীির্ত কমেছে। এতে স্পষ্ট হতে পারে, সরকার কঠোর থাকলে দুনীির্ত দমন করা অসম্ভব নয়। যদিও কোনো দেশ থেকে শতভাগ দুনীির্ত নিমূর্ল করা সম্ভব হয় না। দুনীির্ত প্রতিরোধে সরকার সচেষ্ট ও কঠোর থাকলে দুনীির্ত যেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না, তেমনইভাবে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত কিংবা সরকারের সাফল্যও ¤øান করে দিতে ব্যথর্ হয়। আর এটি বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ, দুনীির্ত ও মাদক নিমূের্লর ক্ষেত্রে আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা অত্যন্ত বিবেচনাপ্রসূত এবং সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। শুধু দুনীির্ত নয়, জাতির কাছে দেয়া প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাটা শুধু চেয়ারে বসে ভোগ করার বিষয় নয়, এটা জনগণের কাছে দায়িত্ববোধ। অস্বীকারের উপায় নেই যে, সরকারের নানামুখী কমর্কাÐে দেশ থেকে দুনীির্ত কমেছে। আবার দুনীির্ত যে একেবারেই শেষ হয়ে গেছে, এমনও নয়। অতীতে আমাদের দেশ বারবার দুনীির্ততে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যা ছিল সত্যিকারের লজ্জার। তবে শেখ হাসিনা সরকারের বিগত শাসনামলে আমরা লক্ষ্য করেছি, দেশের বাঘা বাঘা দুনীির্তবাজদের বিচার হয়েছে, যা এখনো চলমান। দুনীির্তবাজদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত আশা জাগানিয়া। দুনীির্তর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ বিচার করা সম্ভব হলে তা দুনীির্ত প্রতিরোধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও ধারণা করা যেতে পারে। ফলে দুনীির্তবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনিদের্শনা বলেই আমরা বিবেচনা করি। দুনীির্ত থাকলে দেশের সত্যিকার উন্নয়ন হয় নাÑ সে কথা বলাই বাহুল্য। আমরা আগেও বলেছি, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দুনীির্তবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ। আমরাও প্রত্যাশা করি, দেশের উন্নয়নের স্বাথের্ দুনীির্ত, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে। যারা দুনীির্ত, সন্ত্রাস করবে এবং জঙ্গিবাদে জড়াবে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। দেশের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এটা প্রয়োজন। সবোর্পরি, আমরা দুনীির্তগ্রস্ত সমাজ চাই নাÑ জনমনেও এ উপলব্ধি ক্রমেই বাড়ছে। ফলে মনে রাখা দরকার, মযার্দাশীল ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের সারিতে নিজেদের দেখতে চাইলে ‘দুনীির্তকে না’ বলতেই হবে। এটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি যে, দুনীির্ত করে কেউ রেহাই পাবে না, তার পরিচয় যাই হোক না কেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে দুনীির্তবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকÑ এটিই আমাদের প্রত্যাশা।