পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়ল

অস্থিরতা দূর হোক

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিভিন্ন সময়েই তৈরি পোশাক খাতকে ঘিরে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিক সময়েও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। আর এবারে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মূলত শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, টানা শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সবের্শষ মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে মোট বেতন ১৫ টাকা থেকে ৭৮৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তথ্য মতে, রোববার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত জানান। এখন প্রথম গ্রেডের একজন কমীর্ সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেনÑ যেখানে ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, সংশোধিত এই কাঠামো ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কাযর্কর ধরা হবে বলেই জানা গেছে, আর বধির্ত অংশের টাকা ফেব্রæয়ারির বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। বলা দরকার, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নিধার্রণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কাযর্কর করার নিদের্শনা দেয়া হয় সেখানে। ওই মজুরি কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও আশপাশের গামের্ন্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ছাড়া অনেক কারখানায় নিধাির্রত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে। আমরা বলতে চাই, সময়ের চাহিদা ও সামগ্রিক ব্যয়ের সঙ্গে শ্রমিকদের আয়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, শ্রমিক অসন্তোষ থাকলে তা যেমন উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থেকে যায় তেমনিভাবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গামের্ন্টশিল্পর জন্যও তা ইতিবাচক নয়। সঙ্গত কারণেই জীবনযাপনের ব্যয় ও সাবির্ক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের যথাযথ বেতন কাঠামো নিধার্রণ এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন অপরিহাযর্ বলেই প্রতীয়মান হয়। মনে রাখতে হবে, শ্রমিকরাই উৎপাদনের চাকা অব্যাহত রাখে। দেশের সাবির্ক সমৃদ্ধি অজের্ন শ্রমিকদের অবদান অত্যন্ত তাৎপযর্ বহন করে। ফলে কোনোভাবেই যেন শ্রমিকরা বঞ্চিত না হয় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে। লক্ষণীয়, দেশের রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করতে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি সাবির্ক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটাও জানা গেছে, বিশ্ব বাজারে ক্রমেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক। ফলে তৈরি পোশাক খাতে যে কোনো ধরনের অসন্তোষ নিবৃত করতে হবে। পোশাকশিল্প বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ শিল্প শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অজের্নর মাধ্যমে দেশীয় অথর্নীতিকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলছে তা নয়, সে সঙ্গে ক্রমবধর্মান বেকারত্ব নিরসনেও ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। অন্যদিকে অসচ্ছল ও দারিদ্র্যপীড়িত নারীদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। সুতরাং এ খাতের যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি নিরসনে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ও কাযর্কর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, শ্রমিকদের বেতনসহ তৈরি পোশাক খাতকে ঘিরে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেই লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ জারি থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।