সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও বতর্মান সরকার

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে দঁাড়াক, সংখ্যালঘুরাও নিজ দেশে নিরাপদে থাকুক, সেটাই সবার প্রত্যাশা। আর এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আমাদের সবাইকে তথা নতুন সরকারকে। মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুরাও এ দেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নিরাপত্তায় বিঘিœত হলে তাদের আস্থায় ধস নামবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

তারাপদ আচাযর্্য
শান্তিপূণর্ভাবে সম্পন্ন হয়ে গেল দেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন। এবার বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটেনি, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়নি। সেজন নিবার্চন কমিশন ও সরকারকে ধন্যবাদ। এই নিবার্চনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অভ‚তপূবর্ বিজয় অজির্ত হয়েছে। এবারের নিবার্চনে ৭০-এর নিবার্চনের মতো সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছে। এবার নৌকার গণজোয়ার এসেছিল। এই অজর্নকে সাফল্য হিসেবে বাংলাদেশে আবহমানকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ধারা বয়ে চলেছে। আমাদের এই বাংলাদেশে ভালো যত নজির, উদাহরণ, রেকডর্Ñ সব আওয়ামী লীগ তথা এর নেতানেত্রীদের সৃষ্টি। ভাবতে ভালো লাগে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাদার অব হিউম্যানিটি, দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা চতুথর্বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য ইতিহাস, নজির এবং রেকডর্ হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার সরকার গঠনের বিষয়টি অতীতের সব রেকডের্ক ছাপিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালের সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েও যেমন রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পযর্ন্ত প্রথম মেয়াদে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পযর্ন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পযর্ন্ত তৃতীয় মেয়াদে এবং ২০১৯ সাল থেকে পরবতীর্ পঁাচ বছরের জন্য টানা তৃতীয় মেয়াদে এবং মোট সবোর্চ্চ চারবার সরকার গঠন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন রেকডর্ সৃষ্টি করলেন শেখ হাসিনা। এবারের নিবার্চনের একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এবার নিবার্চনকে কেন্দ্র করে দেশের সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়নি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। এ কথা সত্য, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে আমরা অন্ধকারের দিকে যাত্রা শুরু করি। তারপরে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পযর্ন্ত পুরো সময়টাই অন্ধকার যুগ অথবা অন্ধকার থেকে বের হয়ে আলোর দিকে যাওয়ার কণ্টকাকীণর্ সংগ্রামের কাল। অনেক রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এবং এরপর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুবার্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে এ দেশের সংখ্যালঘুরাও নিরাপদে আছে। ভবিষ্যতেও তারা নিরাপদে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ কথাও মনে রাখতে হবে, ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় এলে বিভীষিকা আর অন্ধকার নেমে আসে, সনাতন ধমার্বলম্বীরা সারা বাংলায় নিপীড়িত নিযাির্তত হয়। ধষির্ত হয় ফাহিমা-পূণির্মা। কত হিন্দু রমণীকে পৈশাচিকভাবে ধষর্ণ করেছে ওই ববর্র শক্তি। নিরীহ মানুষের ওপর নিযার্তন চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই স্মৃতি স্মরণে এলে মন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। ওই অপকীতির্ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিশ্বাসে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা একটি প্লাটফমের্ সমবেত হয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক অঙ্গন প্রতিষ্ঠার কাযর্ক্রম চালানোটা জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই এই বিষয়টি ৭১-এর পক্ষের শক্তি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়াটা প্রয়োজন, বিশেষ করে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নে। এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার জের হিসেবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল। কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল এ দেশের সংখ্যালঘুরা। ১৯৭৫, ১৯৯২ ও ২০০১ সালের কথা কি ভুলে যাওয়া যায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ দেশের সংখ্যালঘুরা স্বস্তিতে শান্তিতে দিনাতিপাত করেছে। তারই ধারাবাহিকতা তারা দেখতে চেয়েছিল। তারই সফলতা পেয়েছে তারা। নতুন সরকারের আমলে তারা এখন স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবে। সরকার বদল হলে দেশের সংখ্যালঘুদের পরিণাম যে কী হতো তা বলাই বাহুল্য। আমরা চাই নতুন সরকারের কমর্তৎপরতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হোক, দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে শান্তিতে স্বস্তিতে বসবাস করুক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ থাকুক। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়নের ধারাটা সূচিত হয়েছে, আমরা মেগা প্রকল্পগুলো নিয়েছি, দারিদ্র্য বিমোচনের যে অঙ্গীকার করেছি। দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আরও চার থেকে পঁাচ ভাগ কমাতে পারব। তাহলে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করতে পারব। আমরা না থাকলে কেউ করবে না। প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ অযৌক্তি। এবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে দঁাড়াক, সংখ্যালঘুরাও নিজ দেশে নিরাপদে থাকুক, সেটাই সবার প্রত্যাশা। আর এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আমাদের সবাইকে তথা নতুন সরকারকে। মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুরাও এ দেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নিরাপত্তায় বিঘিœত হলে তাদের আস্থায় ধস নামবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেই। জাতি, ধমর্, বণর্, গোত্র নিবিের্শষে সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক। সমান অধিকার সবার, সেটাই প্রতিষ্ঠিত হোক। তারাপদ আচাযর্্য: কলাম লেখক