পাঠক মত

রাজধানীমুখীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বেশ কিছু পরিকল্পিত কাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকায় বেশ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের ছেঁায়া থেকে পল্লী জনপদ এখনও অনেকটা বঞ্চিত। পল্লীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। কমের্র সুযোগ-সুবিধাও তেমন একটা সৃষ্টি হয়নি। ফলে গ্রামের মানুষগুলো জীবনের নানা চাহিদা পূরণের জন্য রাজধানীর দিকে ক্রমশ ধাবিত হচ্ছে। আর তাই রাজধানীতে গ্রামের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রাজধানী ক্রমশ সমস্যা জজির্রত হতে শুরু করেছে। গ্রামে অথৈর্নতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা বিদ্যমান। এসব কারণে রাজধানীমুখী হওয়ার প্রবণতা মানুষের মাঝে দিন দিন বাড়াটা স্বাভাবিক। রাজধানীতে বৃদ্ধি পাওয়া মানুষের সংখ্যা শুধু নিদির্ষ্ট কোনো জেলার নয়, সারাদেশ থেকেই ক্রমাগত মানুষ আসছে। এসব মানুষদের রাজধানীতে আগমনে এখনই নিরুৎসাহিত করতে হবে। এমনিতেই রাজধানীতে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের প্রবল সংকটসহ দখল, দূষণ ও যানজটে নিমজ্জিত, তার ওপর গ্রামের মানুষের এই রাজধানীমুখী হওয়ার প্রবণতা রাজধানীতে সমস্যা থেকে আরও সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। অতিকায় সত্য কথা যে রাজধানী ঢাকায় শিক্ষার পরিবেশ ও পড়ালেখার মান অনেক ভালো ও মানসম্মত। এখানে রয়েছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার অনবদ্য সুযোগ রয়েছে। আবার পড়ালেখা শেষ করে কমর্সংস্থানেরও একটি সুযোগ রয়েছে। অথচ অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে তেমন কোনো বড় ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, পরিমিত বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কতিপয় বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও তার প্রতি আগ্রহ কম। নেই কোনো বড় ধরনের চাকরির প্রতিষ্ঠান বা মিলকারখানা, গামের্ন্টস ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। রাজধানীতে কমর্সহ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা গিজগিজ করছে। এত সব সুযোগ-সুবিধার জন্য শিক্ষাথীর্রাসহ চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে। পরিসংখ্যান দেখলে বা জরিপ করলে দেখা যাবে, রাজধানীতে শিক্ষাথীর্, চাকরিপ্রত্যাশী ও ব্যাচেলরের সংখ্যা তুলনামুলক বেশি। এভাবে সবাই যদি রাজধানীতে পাড়ি জমায় তাহলে জনসংখ্যার সুসম বণ্টন বা ভারসাম্য বজায় রাখা সত্যিই কষ্ট্যসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে। আমাদের দেশে প্রতি বছরই বষার্কালে পাহাড়ি এলাকায় ঢল নামে, পাহাড় ধসে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো তীব্র বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। খাদ্যের প্রকট সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় দুযোের্গ মহামারী আকার ধারণ করে। তখন তাদের অকৃষি কাজ করতে রাজধানীতে আসতেই হয়। বন্যা ও নদীভাঙনের কারণেও মানুষ মাঝে মাঝে রাজধানীতে চলে আসে। এভাবে রাজধানীমুখীর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ আজও চোখে পড়েনি। এমনিতেই বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। একদিকে গ্রামে কমর্সংস্থানের সুযোগ-সুবিধা কম। আবার গ্রামের মানুষের রাজধানীমুখী প্রবণতার কারণে ঢাকায় জনসংখ্যার তীব্র জট সৃষ্টি হয়েছে বৈকি এখনও হচ্ছে। ফলে রাজধানী জনসংখ্যার বাড়তি চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। রাজধানীতে চলাচলরত বাস, ট্রেনের দিকে নজর দিলে বিষয়টি উপলব্ধি করা যাবে। ফলে রাজধানীর সমস্যাগুলো আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে। মূলত গ্রামের জনসংখ্যার রাজধানীমুখীর প্রবণতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সারা পৃথিবীতেই শহর বা রাজধানীমুখী মানুষের ক্রমাগত ভিড় বাড়ছে। আমরা জানি, নগরায়নের ফলে মানুষ শহরমুখী হয়ে থাকে। নগর মানেই তো অঢেল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কিংবা বিলাস বহুল জীবন জীবিকা। কিন্তু এটা সত্য যে আমরা নগরায়নের পাশাপাশি নগরগুলোর পযার্প্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না। পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে অনেক প্রকল্পই কাজে আসছে না। বাজেটের নিধাির্রত অথের্র বিনাশ হচ্ছে। মূলত বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে না। ফলে উদ্ধৃত সমস্যার পাশাপাশি নতুন নতুন সমস্যা আরও জটিল রূপ ধারণ করছে। সম্প্রতি রাজধানীতে সমস্যা তীব্র আকার রূপ নিয়েছে। এ থেকে সকলে পরিত্রাণ কামনা করছে। এত মানুষের আনাগোনা যে শহরজুড়ে মানুষ আর যানবাহন। এ সমস্যার অন্যতম কারণ জনসংখ্যার অসম বণ্টন। সবাই শুধু রাজধানীমুখী। ঢাকায় এত জনগণের বসবাস নিশ্চিত করতে গিয়ে দিন দিন ভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। খাল বিলে বিল্ডিং গড়ে উঠছে। বস্তি-মহল্লার সংখ্যা বাড়ছে। মোটের ওপর জনসংখ্যার তীব্র চাপের কারণে রাজধানী অপরিকল্পিত শহর হয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হচ্ছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। রাজধানীর এমন বেহাল অবস্থা দূরীকরণে গ্রামের মানুষকে রাজধানী বিমুখ করতে হবে। রাজধানীতে আগমনে নিরৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং দীঘের্ময়াদি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তবে এ বিষয়টি আমি যত সহজে বললাম, বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। কেননা রাজধানীর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকার দেশের সকল জনগণের আছে। তাই বিকল্প হিসাবে পল্লী জনপদের মানুষকে রাজধানীর মত সুযোগ-সুবিধাদী প্রদান করতে জেলা ও উপজেলা শহরগুলো রাজধানীর আদলে গড়ে তুলতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য পযার্প্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কমর্সংস্থানের জন্য শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কৃষি নিভর্রশীলতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। যখন গ্রামের মানুষজন শহরের মতো ছোয়া পাবে, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে তখন কেউ আর সহজে রাজধানীমুখী হবে না। চিকিৎসাসেবা নিতে রাজধানীতে আসবে না। বিভাগীয় শহরগুলোর আধুনিকায়নই পারে ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। অতএব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়োপযোগী। আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। তাহলে গ্রামের মানুষের জন্য কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা কোথায় হবে? সবাই হয়তো কৃষির সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু কৃষির ওপর নিভর্রশীল আরও অনেক ধরনের অথৈর্নতিক কমর্কাÐ আছে। সেগুলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সকলের কমর্সংস্থানের জন্য আরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। যারা স্থানীয় পযাের্য় সকলের জন্য কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। অন্যদিকে নগরায়নের ঝুঁকিগুলো কমানো বা পরিবেশ বিপযের্য়র দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। আবার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামো বিকেন্দ্রীকরণ করে রাজধানীমুখী মানুষের জনসংখ্যার চাপ কমানো যেতে পারে। অথার্ৎ শহরের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। যাতে করে মানুষ শহরের সুবিধাগুলো গ্রামে বসেই পেতে পারে। তাহলে রাজধানী ঢাকায় মানুষের চাপ কমবে। ধীরে ধীরে প্রতিটা জেলা শহর রাজধানীর মতোই হবে। জনসংখ্যার সুষ্ঠু বণ্টন বজায় থাকবে। একটি দেশের রাজধানী পরিকল্পিতভাবে চললে, একটি দেশও পরিকল্পিত ভাবে চলে। সবোর্পরি রাজধানীর উন্নয়ন হলে বাংলাদেশ একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ হবে একথায় কোনো ভুল নেই। মোহাম্মদ অংকন ঢাকা