বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভর্ চুরি

জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি সিস্টেম হ্যাক করে ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক অব নিউ ইয়কের্ রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা ও ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, এরই মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন বা এক কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, যখন জানা যাচ্ছে যে, সাইবার হ্যাকের মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অথর্ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের (আরসিবিসি) সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতের কারাদÐ হলেও অন্যদের এখনো খেঁাজ নেইÑ তখন তা অত্যন্ত পরিতাপের জন্ম দেয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজাভর্ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভের্র অথর্ চুরির ঘটনায় জড়িত ফিলিপাইনের ছয় কমর্কতার্র বিচার কাজ এখনো ঝুলে আছে। ওই ছয় কমর্কতার্র বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের অথর্ পাচারবিরোধী কতৃর্পক্ষ অভিযোগ দায়ের করলেও তারা এখনো ধরাছেঁায়ার বাইরে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে ফিলিপাইনি সংবাদমাধ্যম ফিলিপাইন স্টার এ কথা জানিয়েছে। আমরা বলতে চাই, এত বড় চুরির ঘটনায় যদি অপরাধীরা ধরাছেঁায়ার বাইরে থেকে যায় তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়ার দরকার, পুরো বিষয়টি আমলে নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা। আমরা বলতে চাই, যখন তিন বছরের মাথায় দেগুইতোর বিরুদ্ধে রায় পাওয়া গেলেও অপর কমর্কতাের্দর বিচার কাযর্ক্রম এখনো শুরু হয়নি তখন এই বিষয়টি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম ফিলিপাইন স্টারকে জানিয়েছে, আরসিবিসির কমর্কতাের্দর বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের অথর্পাচারবিরোধী পরিষদের দায়েরকৃত (এএমএলসি) অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্বে রয়েছে আইনসংক্রান্ত দপ্তর (ডিওজে)। ডিওজে এ প্রক্রিয়া দ্রæত শেষ করবে বলেই তারা আশা করেন। আমরাও চাই, যত দ্রæত সম্ভব সাবির্ক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। এটাও উল্লেখ করা দরকার যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভর্ চুরির ঘটনায় গাফিলতি, অবহেলা বা অপরাধীদের পরোক্ষ সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্দর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারেÑ এমন মন্তব্যও করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মত দিয়েছেন যে, ড. ফরাসউদ্দিনের প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে, এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পযাের্য়র যেসব কমর্কতার্ রিজাভর্ চুরিতে সহায়তা করেছেন বা অপরাধ সংঘটনে ভ‚মিকা রেখেছেন, তাদেরও চিহ্নিত করা দরকার। আর সিআইডির তদন্তের মাধ্যমে এটি করা সম্ভব এমন বিষয়ও সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হ্যাক হওয়া অথর্ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখান থেকে ওই অথর্ ফিলিপিনো পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে চলে যায়। এ ঘটনায় দায়ী করে গত ১০ জানুয়ারি রিজাল কমাশির্য়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে কারাদÐ দেয় দেশটির আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভর্ চুরিসহ অথর্ পাচারের আট দফা অভিযোগে তাকে দÐ দেয়া হয়। তবে এ রিজাভর্ চুরির ঘটনায় দেগুইতো ছাড়াও আরসিবিসির আরো ছয় কমর্কতার্র বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যারাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে যেমন আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি, এই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবনার অবকাশ রাখে যে, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কেননা, এমন বিষয়ও সামনে আসছে যে, রেকডর্ পরিমাণ জালিয়াতির এ ঘটনার এখানেই যে শেষ, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাভার্র সিস্টেম সিকিউড করা, হ্যাকিং বা জালিয়াতির ঘটনা দমন করতে আইনের প্রয়োগসহ সামগ্রিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য।