বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ

পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ উন্নয়নের চিত্র। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বিশ্বের সব উন্নত দেশের সঙ্গে উড়বে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুরব্বি একটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন ওটা তো তলাবিহীন ঝুড়ি। বাংলাদেশ টিকে থাকবে না এমন কথাও বলার চেষ্টা করত মুক্তিযুদ্ধের দেশি-বিদেশি শত্রম্নরা। কিন্তু ফিনিক্স পাখির মতো বাংলাদেশ ভস্ম থেকে উড়াল দেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ৫১ বছর পর বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তিতে। কানাডাভিত্তিক ভিজু্যয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর আকারের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের পরেই স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পরিসংখ্যান নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থাটি। 'দি টপ হেভি গেস্নাবাল ইকোনমি' শীর্ষক ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জিডিপির ভিত্তিতে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে চীন ও জাপানের অবস্থান। চতুর্থ স্থানে জার্মান এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। এই প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এ সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছরে এ অবস্থান ছিল ৪১, সে সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, শ্রীলঙ্কার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ- এমন একটি প্রচারণা চালাচ্ছে ঘরের শত্রম্ন বিভীষণরা। তাদের মদত জোগাচ্ছে বিদেশি মুরব্বিরা। কিন্তু তাদের মুখে ছাই ছুড়ে দিয়েছে কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে ৪১তম থেকে ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়া তারই প্রমাণ। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামকে পেছনে ফেললেও এতে আত্মপ্রসাদে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। জনসংখ্যার বিচারে অর্থনীতিতে ওই দেশগুলোর সমান হতে গেলে বাংলাদেশকে আরও এগোতে হবে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশের মানুষের ওপর জুলুম চালাতে থাকে স্বৈরাচার এবং উগ্রবাদী বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রাজধানীর সঙ্গে পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটায়। সারাদেশের বহু মহাসড়ককে চার ও ছয় লেনে উন্নীত করা হয়। ফলে দেশের এক প্রত্যন্ত থেকে অন্য প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন সহজ হয়ে গেছে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছেন প্রান্তিক চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমটির দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে। খরস্রোতা পদ্মা নদীর উপর বহুমুখী দ্বিতল সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পাবনার রূপপুরে ১২শ' মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনও শুরু হবে শিগগিরই। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়, স্থলসীমানা নির্ধারণ, দেশের প্রায় সম আয়তন নতুন জলসীমা জয়- এসব কোনো কিছুই করার চেষ্টা করেনি স্বৈরাচার ও বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার কারণেই এসব অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই, প্রথমবারের মতো মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বিশ্বকে নিজেদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কেও নতুন বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে বাঙালি জাতি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন, তখনো দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদু্যৎ সুবিধা পেত। নিয়মিত লোডশেডিংয়ে তখন জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। বিদু্যৎ খাতের এই করুণ অবস্থার কারণে বৃহৎ শিল্পগুলো যেমন একদিকে ধুঁকছিল, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদু্যতায়ন নিশ্চিত করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। একই সঙ্গে দেশকে ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শতভাগ বিদু্যতায়নের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সুবিধা। যার কারণে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। বিএনপি-জামায়াত সরকার মোবাইল ফোন ব্যবসায় মনোপলি সৃষ্টি করে জনগণের নাগালের বাইরে রেখেছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করে সবার জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে সবার হাতে হাতে পৌঁছে যায় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সরকার ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু করে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে। ফলে এখন দেশের ৮ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইলের মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন ও ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারছে। ডিজিটাল ডিভাইসকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করায় গণমানুষের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বহুগুণ বেড়েছে। এমনকি, ডিজিটাল সুবিধাকে ব্যবহার করে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। এছাড়াও প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে ৫০০ মিলিয়নের বেশি ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করছে। এই খাত থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে- ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ স্স্নোগানে দেশের মানুষের শতভাগ ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা পর্যালোচনা করে এজন্যই জাতিসংঘের রেজু্যলেশনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করেছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মাত্র এক যুগের মধ্যে এই বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় উত্তরণ কোনো অলৌকিক কিছু নয়। বরং আওয়ামী সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং গণমানুষের জন্য গৃহীত সুপরিকল্পিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে আজ স্মার্ট জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমীহ আদায় করতে সমর্থ হয়েছি আমরা। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ উন্নয়নের চিত্র। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বিশ্বের সব উন্নত দেশের সঙ্গে উড়বে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম