পাঠক মত

মাদকেই সর্বনাশ

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

জুবায়ের আহমেদ
একটি শিশু জন্মের পর কথা বলতে শেখার সময় থেকে পরিবারের সদস্য এবং পরবর্তীতে শিক্ষকের মাধ্যমে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা পায়। শিশুরা ছোটবেলায় ইতিবাচক মানসিকতার হয়; কিন্তু ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে যখন বন্ধু নির্বাচন করতে পারে এবং বাইরের পৃথিবীত দেখতে পায়, তখন থেকেই মূলত শিশুর মধ্যে ভালোর পাশাপাশি মন্দের সঙ্গে পরিচয় হতে শুরু করে। এই সময়ে যদি বন্ধু বেছে নিতে ভুল করা হয়, তাতেই বাঁধে বিপত্তি। ভুল বন্ধুর মাধ্যমে মাদকের দিকে ঝুঁকে যাওয়া ছাড়াও অপরাধজনক কর্মকান্ডের ফাঁদে পড়ে শিশুটি। পাশাপাশি কোনো শিশুর শিশুকাল ভালো গেলেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি ভুল বন্ধু নির্বাচন করে ফেলে, তাতে করেও মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হয় তরুণ-তরুণীরা। মাদকের নষ্টচক্রে আটকে গেলেই একজন মানুষ স্বাভাবিক নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। নষ্ট হয়ে যায় বিবেকবোধ। ফলে এই ব্যক্তির দ্বারা যে কোনো অপরাধ ঘটতে পারে অনাসায়েই। এই সব অপরাধীদের মধ্যে থাকে না কোনো অনুশোচনা। একজন মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে গেলে তার মধ্যে মানবিকবোধ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, অবরুদ্ধ হয়ে যায় বিবেক, যার ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্বারা যে কোনো ধরনের অপরাধ মুহূর্তের মধ্যেই সংঘটিত হয়ে যায় কোনো অনুশোচনা ছাড়াই। ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে সুবিধাবাদীরা। সময়ে সময়ে সংঘটিত হত্যাকান্ড ও ধর্ষণের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অধিকাংশ খুনি ও ধর্ষকই মাদকাসক্ত ছিলেন মর্মে প্রমাণিত হয়। দেশব্যাপী মাদকের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, তরুণ-তরুণীরা মাদকে বেশি আসক্ত হলেও শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই মরণঘাতী মাদক গ্রহণ করছে। সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগসহ সামাজিকভাবে মাদকের ভয়াবহতা এবং পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলেও কমছে না মাদকসেবীর সংখ্যা, কমছে না মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা। মাদক ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার নেশায় সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা ও পরিণতির কথা বুঝতে ও জানতে না পারায় বহু কিশোর-কিশোরী বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা মাদক বিক্রেতাদের ফাঁদে পা দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো অন্য কোনো মানুষ যদি বেস্নডের আঘাতেও শরীরে কোনো অংশ সামান্য কেটে ফেলে। সেখানে সহমর্মিতা জানাবে, রক্ত দেখে ভয় পাবে, প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসবে; কিন্তু একজন মানুষ যখন মাদকাসক্ত হয়ে যায়, তখন খুন জখম, কাটাকাটি, রক্তপাত তার কাছে কিছুই না। বর্তমানে আমাদের দেশে ঘটা একটি খুনের ঘটনার গভীরে গিয়ে জানা যায় খুনি মাদকাসক্ত ছিলেন, ধর্ষক কিংবা উত্ত্যক্তকারী মাদকসেবন করতেন। বাংলাদেশে যত ভয়ংকর অপরাধ ঘটে, তার মধ্যে অধিকাংশই মাদকসেবীর দ্বারা সংঘটিত। রাজনৈতিক দুষ্ট নেতার স্বার্থ হাসিলের কাজেও ব্যবহার হয় মাদসেবীরা কিংবা ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ হাসিলের কাজেও ব্যবহার হয় মাদসেবীরা। শুধু কারও দ্বারা ব্যবহারই নয়, স্বয়ং পরিবারের সদস্যদেরও মারধর কিংবা হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও সংঘটিত হয় মাদকাসক্তদের দ্বারা। অধিকাংশ অপরাধের মূলেই মাদক, মাদকেই সর্বনাশ। দেশ থেকে মাদক নির্মূল ছাড়া অপরাধজনক কর্মকান্ড কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাবা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের মনে রাখতে হবে অসৎসঙ্গের কারণে এবং পরিবারের অবহেলা কিংবা অধিক আস্কারা পেয়েই মাদক সেবনে আগ্রহী হয় তরুণ-তরুণীরা। সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে বাবা-মাকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা কার সঙ্গে মেলামেশা করছে সেদিকে খেয়াল রাখা বাবা-মাসহ পরিবারের বড় সদস্যদের দায়িত্ব। পরিবারের সদস্যদের সঠিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার ব্যবস্থা করতে হবে। দায়িত্ববান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে সুস্থ করার চেষ্টার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। সবাই মিলে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারলে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন কাজ হবে না। জুবায়ের আহমেদ শিক্ষার্থী ডিপেস্নামা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম) কাটাবন, ঢাকা