রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক

একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তজাির্তকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভ‚ষিত হয়েছেন মযার্দাপূণর্ অসংখ্য পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে।

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আর কে চৌধুরী
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়ায় কিশোর বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূবর্তন ইন্টারমিডিয়েট গভনের্মন্ট গালর্স কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নিবাির্চত হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬ দফা দাবিতে তদানীন্তন পূবর্ পাকিস্তানে এক অভ‚তপূবর্ জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় প্রচÐ দমন-নিযার্তন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর শঙ্কা ও দুঃসহ দুঃখ-কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই কারাবন্দি পিতা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নিমর্ম বুলেটে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রæয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বি-বাষির্ক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নিবাির্চত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবতর্ন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীঘর্ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিবাির্চত হন। তার সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। বাংলাদেশ অজর্ন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্তা। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দঁাড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বণর্যুগ হিসেবে। ২০০১ সালের ষড়যন্ত্র ও কারচুপির নিবার্চনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। এ সময় দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে জোট সরকার সারাদেশে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। হত্যা করা হয় ২১ হাজার দলীয় নেতাকমীের্ক। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট তদানীন্তন বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারি মদতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা; শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল মূল লক্ষ্য। গুরুতরভাবে আহত হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে এই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকমীর্ নিহত হন। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান অসংখ্য নেতাকমীর্। বাংলাদেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চন। অজির্ত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুথার্ংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন। ২০১৮ সালে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে রেকডর্ সৃষ্টি করে তিনি চতুথর্বারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। তার গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এক বণার্ঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানিযার্তন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ১৯ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অজের্ন থেকেছেন অবিচল। সহজ সারল্যে ভরা তার ব্যক্তিগত জীবন। মেধা-মনন, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈযর্, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদশের্ গড়ে উঠেছে তার আকষর্ণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবনযাত্রায় কোথাও বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার কোনো ছাপ নেই। নিষ্ঠাবান ধামির্ক তিনি। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে তার দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন কয়েকবার। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তজাির্তকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভ‚ষিত হয়েছেন মযার্দাপূণর্ অসংখ্য পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নিযার্তনে আশ্রয়হীন ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণাথীের্ক বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদশির্তা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদলের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার সুনিপুণ কারিগর শেখ হাসিনা। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আর কে চৌধুরী: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা