সংরক্ষিত বন রক্ষায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভান্ডার হচ্ছে সংরক্ষিত বন। সংরক্ষিত বনই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। সংরক্ষিত বন আছে বলেই উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে আছে। এই বন শুধু গাছপালাই রক্ষা করে না বরং সব প্রাণিজগৎকে বাঁচিয়েও রেখেছে। অনেক উন্নত জাতের ফসল উদ্ভাবনের জন্য বন্য প্রজাতির ফসলের জিন সংগ্রহ করা হয় এই বন থেকে। কিন্তু দিনে দিনে অবাধে ইট ভাটার কারণে এই বনের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে। বান্দরবানের লামা পাহাড় ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এলাকা। কিন্তু সেই সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের ভেতরে একটি-দুটি নয়, গড়ে তোলা হয়েছে ২৮টি অবৈধভাবে ইটভাটা। আইন অমান্য করে ভাটাগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় কেটে সাবাড় করা মাটি ও বনের গাছ। ধ্বংস করা হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও বনের পরিবেশ। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব ইটভাটা সংরক্ষিত বন এলাকার পাশেই গড়ে উঠেছে। তাছাড়া চরফ্যাশনে অধিকাংশ ভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, সংরক্ষিত বনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করেছে অবৈধ ইটভাটা। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে ছোট ব্যারেলের চিমনি। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। প্রভাবশালী হাত বদল করে দীর্ঘবছর ধরে চলছে ২০টির ও বেশি ইটভাটা। আইনানুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। অন্যদিকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে উলেস্নখ আছে সংরক্ষিত বনের ভেতর তো নয়ই, অন্তত তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেই মূলত আবাসিক এলাকাতেও ইটভাটা দেখা যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা আবাসিক জায়গা থেকে ইটভাটাগুলো সরিয়ে নিতে খুব একটা আগ্রহী নন। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড একটি অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস। অনবায়নযোগ্য জ্বালানি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনায়ন ধ্বংসের ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। যদি অপরিকল্পিত ইটভাটা স্থাপনের কারণে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাহলে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়ে যাবে। যেভাবে একাধিক নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে সেভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতিও করছে একাধিক। ইটভাটায় অবাধেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, দূষণকারী টায়ার। কাঠের জোগান দেওয়ার জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে বনের গাছ। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারদিকের পরিবেশ। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন জটিল রোগে। এসব বনের ফলজ, বনজ, ঔষধি বৃক্ষ ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রভাব পড়ছে বনের বিভিন্ন পশু-পাখির ওপর। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খল। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য হিসাব অনুযায়ী, ৯৮ শতাংশ ইটভাটা নতুন আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে চলছে। এ ছাড়া নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কৃষিজমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, অনুমতিবিহীন বৃক্ষ কর্তন ও বনভূমিকে কৃষি জমিতে স্থানান্তর, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, নদী-নালা ভরাট, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মাটি, পানি ও বায়ুদূষণে প্রতিনিয়ত সংরক্ষিত বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সরকারের এ বিধিমালা লঙ্ঘন করে একশ্রেণির প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারের অধ্যাদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অহরহ নতুন নতুুন স'মিল বসাচ্ছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত বনের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের নামে প্রতিনিয়তই বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে। তাই সংরক্ষিত বনে ইট পোড়ানোর তৎপরতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। আয়োজন করে নয়, বরং যখনই যেখানে কোনো ঘটনা ঘটে সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণে বিদ্যমান বাস্তব অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, রাজনৈতিক দল ও গবেষকদের সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আবির সুজন ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়