সড়ক তুমি কবে নিরাপদ হবে?

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আজহার মাহমুদ ঢাকা
নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন, ধমর্ঘট, মিছিল, সমাবেশ কত কিছুই না হলো। ছাত্রদের আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশে নানান কাÐ ঘটে গেল ২০১৮ সালে। যার মধ্যে সাড়াজাগানো বিষয় নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্রদের আন্দোলন। জনমনে আজও প্রশ্ন, আদৌ কি এই নিরাপদ সড়ক আমরা পেয়েছি? থেমেছে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল? গত ২৩ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা যে কারো হৃদয়ে চোট দিতে পারে। তার চেয়ে বড় ঘটনা ২০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জে ভাইবোনসহ ১২ জন নিহত হওয়া। আবার ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশে ১১ জন নিহত হয় সড়ক দুঘর্টনায়। তাহলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থেমেছে কই? একটি জাতীয় দৈনিকে হিসেবে, ৬৮৮ দিনে ৫ হাজার ৯৭৬ জন সড়ক দুঘর্টনায় প্রাণ হারিয়েছেন। গড়ে দৈনিক ৮ জনের বেশি প্রাণ হারাচ্ছে আমাদের দেশে। আমি পরিসংখ্যান নিয়ে টানাটানি করবো না। কারণ পরিসংখ্যান ঘাটলে হতাশা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই প্রাপ্তি নেই। আমি শুধু বলতে চাই, সড়কের প্রাণহানী কমিয়ে আনার কি কোনো উপায় নাই? নিরাপদ সড়কের জন্য আমাদের দেশে সংগঠনেরও অভাব নেই। কিন্তু কেউ কাজের কাজ করছে বলে মনে হয় না। সবাই লোক দেখানো কাজে মেতে ওঠে। আর বাকি সময় কেই যেন কিছু জানেই না। আর প্রতিদিন সড়কে ঝরে যাচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। কেউ মা, কেউ বাবা, আবার কেউ হারাচ্ছেন সন্তান। কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। শত শত পরিবার হয়ে যাচ্ছে অসহায়। নতুন বছর, নতুন সরকার, নতুনভাবে দেশটা পরিচালনা করার আগে মনে করিয়ে দিতে চাই নিরাপদ সড়কের কথা। যে সড়কের জন্য ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে, যে সড়কের জন্য স্বজনদের হৃদয় পুড়েছে, যে সড়কের জন্য হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস হয়েছে। বতর্মান সরকার যদি এই বিষয়টির দিকে সুনজর না দেয় তাহলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কখনোই থামবে না। আমাদের আগে চিন্তা করতে হবে কোন কোন স্থানে সড়ক দুঘর্টনা বেশি হয় এবং প্রাণহানী হয়। এবং কেন দুঘর্টনা সৃষ্টি হয়। আমরা যদি সমস্যাটা বের করতে পারি তবে সমাধান কেন বের করতে পারব না। গত নয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুঘর্টনা হয়েছে মোট দুঘর্টনার প্রায় ১৭ ভাগ। যা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং সড়কের কোথায় কি সমস্যা আছে, এবং কোথায় কি করতে হবে সেটা এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৯ সালে আর সড়কে মৃত্যু দেখতে চায় না। বতর্মান সরকারের সাফল্য এবং উন্নয়ন অস্বীকার করার মতো দুঃসাহস কারও নেই। তবে এই সেক্টরের উন্নয়নটা এখনো দৃশ্যমান হয়নি দেশের মানুষের কাছে। এই সেক্টরের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে আরও অনেকখানি জায়গা পাবে বতর্মান সরকার। সেই সঙ্গে এই সেক্টরের উন্নতি না হলে জনগণের আস্থা চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও অধিক। কারণ বছরের আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা এটি। আমরা এই সেক্টরের কাজ দেখি শুধু লোক দেখানো। আসলে এই সেক্টরে চলছে দুনীির্তর মহোৎসব। যা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টির বাইরে। এ সেক্টরের প্রধান বাণিজ্য লাইসেন্স। যত বেশি টাকা, তত আগে লাইসেন্স। সে গাড়ি চালাতে জানুক আর না জানুক। টাকা ঢাললে নাকি লাইসেন্স ২ মিনিটের বিষয়। এমন যদি হয়, তবে সড়কের মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সেক্টরের প্রতি নজর দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করুন। সড়কে মৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের বেতনভুক্ত অনেক কমর্কতার্ রয়েছে। যারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা। অথচ তারা সরকার থেকে জনগণের সেবা করার জন্য পারিশ্রমিক নিয়ে জনগণকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়। সড়কে রোজ মৃত্যু হচ্ছে। অথচ এই সেক্টরের কারও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। আইন থাকলেও কাযর্কর হয় না সেই আইন। কারণ আইনেও এখন চলছে অংকের হিসাব। তাই সুশাসন এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠিত করলে সবদিকেই জনগণের উন্নয়ন হবে। আর জনগণের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। বিচারের আওতায় আনতে হবে সরকারি-বেসরকারি সব কমর্কতাের্দর। যারা পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম এবং দুনীির্ত করছে। এ বিষয়ে সড়কমন্ত্রী ওবাইদুল কাদেরের নজর দিতে হবে। কারণ তিনি আবারও এই সেক্টরের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই সড়কমন্ত্রীর কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা এখন নিরাপদ সড়ক। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতি বলতে চাই, দেশের উন্নয়ন করছেন দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু দেশের মানুষ যদি বেঁচে না থাকে তবে দেশের উন্নয়ন করাটা বৃথা হয়ে যাবে। তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, আগে দেশের মানুষ বঁাচান, তারপর দেশ সাজান। এটাই হোক ২০১৯ সালের কমর্সূচি। আমার বিশ্বাস বতর্মান সরকার এই সেক্টরকেও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবে। সেই সুন্দরের অপেক্ষায় রইলাম আমি এবং আমার দেশের মানুষ।