রোহিঙ্গা সমস্যা প্রকটতর হচ্ছে

বিশ্ব সম্প্রদায়কেই এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারও রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের টালবাহানা এবং সে দেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় রোহিঙ্গারাও ফিরতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিদির্ষ্টকালের জন্য আটকে গেছে। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়া শরণাথীর্ রোহিঙ্গাদের ব্যাপক ধরপাকড় করছে সে দেশের প্রশাসন। মিয়ানমারে ফেরত যেতে হবে এই ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। সঙ্গত কারণেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতা দেখালেও তা এখন অনেকটা বিষফোড়ায় রূপ নিয়েছে। তাদের দীঘের্ময়াদি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের আথর্-সামাজিক চাপও বাড়ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নিযাির্তত নিপীড়িত হয়ে রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রাণের ভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি আন্তজাির্তক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তজাির্তক সংস্থা ও দেশগুলো তখন রোহিঙ্গা নিযার্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং মিয়ানমারকে নানামুখী চাপ দিতে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মিটিংয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য দাবি উত্থাপন করে প্রশংসিত হন। বিভিন্ন দেশের চাপে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এর পরও মিয়ানমার নানা অজুহাত দেখিয়ে এবং বাংলাদেশের সমালোচনা করে বিভিন্ন আন্তজাির্তক সেমিনারে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য সে দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অঙ্গীকার করলেও দেশটি আজও তা করেনি। তথ্য মতে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার নো ম্যান্স ল্যান্ডে পাকা পিলার ও সেতু নিমার্ণ করছে দেশটি। এতে বষার্ মৌসুমে জিরো পয়েন্ট এলাকা প্লাবিত হবে, যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করছেন। মিয়ানমারের এসব কমর্কাÐ স্পষ্ট যে, দেশটি আন্তজাির্তক আইন উপেক্ষা করাসহ জাতিসংঘ এবং আন্তজাির্তক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুরোধও উপেক্ষা করছে। মিয়ানমার এ হেন কমর্কাÐ করতে সাহস পাচ্ছে কীসের শক্তিতেÑ এমন প্রশ্নও অবান্তর হতে পারে না? আমরা মনে করি, আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের কতর্ব্য হওয়া দরকার বিষয়টি শনাক্ত করে কাযর্কর উদ্যোগ নেয়া। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশে ১১ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রিত। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল রাষ্ট্রকে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করাও অত্যন্ত কঠিন। এ ব্যাপারে আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা থাকলেও মোটা দাগে বাংলাদেশকেই ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে। সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছে রোহিঙ্গাদের জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গারা এ দেশে আশ্রিত থাকায় নানামুখী চাপে আছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আথর্-সামাজিক ক্ষেত্রসহ নানান স্তরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোটর্ তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, স্থানীয়ভাবে নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করেছিল। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সাবির্কভাবে বাংলাদেশের জন্য কতটা ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিতি হয়েছে তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এ অবস্থার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেয়া অপরিহাযর্। সবোর্পরি বলতে চাই, মিয়ানমার আন্তজাির্তক আইন অমান্য করে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো, যা ইচ্ছে তাই করবে এটা কিছুতেই সমথর্নযোগ্য হতে পারে না। এ জন্য আন্তজাির্তক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে নিরাপদে প্রত্যাবতের্নর ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয়কালীন সময়ে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য পযার্প্ত ত্রাণের ব্যবস্থাও করতে হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থেকে সংকট মোকাবেলার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রæতি পূরণে এখন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকেও আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এর জন্য ক‚টনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে যত দ্রæত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।